গাজীখালি খালের শেয়াল

অপু চৌধুরী | বুধবার , ২৬ জুন, ২০২৪ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সকালে পুরো বনজুড়ে মাইক বাজিয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে

প্রিয় বনবাসী পশু ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে অদ্য বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে সকাল এগারোটার পর থেকে বনের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত তাপের কারণে প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকলকে সকাল দশ ঘটিকা থেকে বিকাল পাঁচ ঘটিকা পর্যন্ত বাইরে কোথাও শিকার না ধরে কিংবা ঘোরাফেরা না করে নিজ নিজ গর্ত ঘরে অবস্থান করার জন্য বিশেষ ভাবে নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে।

ধন্যবাদান্তে

বন অধিপতি, পশু অধিকার সংরক্ষণ কমিটি, গাজীখালি খাল, সুন্দর বন,খুলনা।

ঘোষণা শুনে আর বিগত কয়েক দিনের গরমের প্রকোপ অনুভব করে সকল পশু দ্রুত গর্তে ঢুকে পড়লেও সিংহ ভাবতে লাগলো

এই বনঅধিপতি আবার কে!

আমি হলাম এই বনে পশুর রাজা, আমার চেয়ে বড় বন অধিপতি হতে পারে এমন সাহস আবার কার!

এই ঘোষণাতো শেয়াল কণ্ঠের মনে হলো!

শেয়াল নতুন করে আবার কোন ফন্দি আঁটল!

এই ঘোষণা যদি সত্যি হয় তাহলে সারা বনজুড়ে ছাগলের আধিপত্য কেন এত বেড়ে গেল!

এসব ভাবতে ভাবতে হালুম হালুম করে গর্জে উঠল সিংহ। সবাই ভয়ে কাবু হয়ে পড়ল, সিংহ আর ছাগল ছাড়া কোনো পশু কিন্তু বাইরে নেই।

ছাগলের আগ থেকেই জানা আছে, তারা অতিরিক্ত গরমে বিচরণ করলেও কোনো সমাস্যায় পড়ে না। তারা বোঝে গরম মানে তাদের নির্ভয়ে অবাধ বিচরণ যা অন্যান্যদের ক্ষেত্রে বিপদের, সিংহ কিছুক্ষণের মধ্যে গুহায় ঢুকে পড়বে।

রাগান্বিত সিংহ জঙ্গলে শেয়ালের গর্তের কাছে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল

এই পাজী শেয়াল, আজ তোমাদের বংশ ধ্বংস করে ফেলব, তুমি কিভাবে এই বনের অধিপতি হলে?

চতুর শেয়াল সিংহের এমন ডাক শুনেই ভয়ে কাঁপতে লাগল, মাথা নিচু করে সিংহকে বলতে লাগল

হুজুর, আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে আপনিও জানেন যে কদিন ধরে বনের ভেতরে বহু প্রাণী গরমে মারা যাচ্ছে, মারা যাচ্ছে লোকালয়ের মানুষও। আমি জানতে পেরেছি মানুষ তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য মাইকে ঘোষণা দিয়ে ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করছে, ফলাফলও তারা পাচ্ছে। সেই কারণে আমি দায়িত্ব নিয়ে বনের ভেতরও এই ঘোষণা দিয়ে সকলের উপকারে আসার চেষ্টা করলাম। আর আমার ঘোষণা শুনে সবাই যদি ঘরে থাকে এবং ছাগলরা বাইরে বিচরণ করে তাহলে আপনার আর আমার লাভ বেশি কেননা আপনাকেআমাকে শিকারের জন্য কষ্ট করে বের হতে হবে না। ছাগল যখন ঘাস খেতে খেতে আপনার গুহার কাছাকাছি এসে পড়বে অমনি একটা ধরে ঘাড় মটকে দেবেন। প্রয়োজনে আমিই ছাগল শিকার করে আপনার গুহায় দিয়ে আসব।

শেয়ালের কথায় সিংহের মনে লোভ জাগল, বিনা কষ্টে গুহায় বসে প্রতিদিন ছাগলের তাজা মাংস পাওয়া যাবে, এতো মহা আনন্দের কথা। স্বভাবগত কারণে রাগ দেখালেও ভেতরে ভেতরে খুশি হলেন সিংহ। শেয়ালকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন,-

আগামীকাল থেকেই তাহলে একটা করে ছাগল গুহায় দিয়ে আসবে নইলে বড় বিপদ হবে তোমার।

শেয়ালজ্বী হুজুর, কোনো ভুল হবে না এতে।

পরের দিন সকাল ১১টা গড়িয়ে ১২টা বাজতে গেল, প্রচণ্ড গরমে কাঁপছে পুরো বন, তাজা ছাগলও নেই শেয়ালের দেখাও নেই। ক্ষুধায় অস্থির সিংহ গুহার ভেতর থেকে জোরে চিৎকার করতে লাগল, কিন্তু কে শোনে কার ডাক। ইতিমধ্যে ছাগল শেয়ালের বুদ্ধি ধরে একসাথে ফন্দি করে সিংহের গুহার ফটক আঁটকে দেয় মাটির ঢেলা দিয়ে। অন্যদিকে শেয়াল গরম আবহাওয়া থেকে রেহা্‌ই পেতে বন্ধুত্ব করে গাজী খালের পানির রাজা কুমিরের সাথে, সে তীব্র গরমে কুমিরের সাথে পানিতে থেকে গা শীতল রাখতে, কুমিরকেও সে ছাগলের মাংস খাওয়ানোর লোভ দেখায়। কুমির লোভে পড়ে শেয়ালকে খালের পানিতে থাকার অভয় দেয়। একদিন পর শেয়াল এক ছাগল ছানাকে ফুসলিয়ে কুমিরের কাছে নিয়ে আসে। দুজনে মিলে ছাগলের মাংস খেয়ে বন্ধুত্ব আরো ঘনিষ্ঠ করে নেয়। সারাদিন আরাম আয়েশে থেকে সন্ধ্যায় নিজ গর্তে ফেরে কুমিরকে সায়েস্তা করার ফন্দি আঁটে শেয়াল।

বনের পরিবেশ শীতল হয়ে এলেও গুহার ফটক বন্ধ থাকায় বের হতে পারছিল না সিংহ। ক্ষুধার্ত সিংহ রাগে ক্ষোভে চিৎকার করছিল। ধূর্ত শেয়াল ধীরে ধীরে গুহার মুখে গিয়ে কান্না করতে লাগল। সিংহ ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করে

কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?

হুজুর! আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আজ আপনার জন্য একটা শেয়াল ধরে আনছিলাম। আপনার গুহার কাছাকাছি যেই এসেছি ;দেখি গাজীখালি খালের পানির রাজা কুমির আপনার গুহার ফটক বন্ধ করে দিচ্ছে, আমি ছাগলটা রেখে তাকে মারতে গেলে আমাকে খুব জোরে আঘাত করে আর ছাগলটা নিয়ে পানিতে নেমে মনের সুখে খাচ্ছে।

এসব কি বলছ শেয়াল? কে সে এই পানির রাজা কুমির? আমি আজ তাকে মেরেই ফেলব। আমার গুহার মুখ খুলে দাও তাড়াতাড়ি।

জ্বী হুজুর! আমি খুলে দিচ্ছি।

সিংহ বের হয়ে এল, এবার বল

কোথায় সেই কুমির? কোথায় তার আস্তানা?

অই ওদিকে হুজুর।

পানিতে লাফিয়ে পড়ে সিংহ, কুমিরও তেড়ে আসল সিংহের দিকে। কী ভয়ানক যুদ্ধ। এক পর্যায়ে কুমির মারা গেল। সিংহও খুব বেশি আহত হয়ে শক্তিহীন অবস্থায় গুহায় ফিরে এল।

চতুর শেয়াল সিংহকে দেখে বলতে লাগল, হুজুর এখন কি বুঝতে পারলেন আমি মাইকে ঘোষণা করার সময় কেন নিজেকে বনের অধিপতি বলেছিলাম?

বনের ভেতরে খালে নর্দমায় কুমিরকে আর দেখা যাবে না আপনি ডাঙায় থেকেও মৃতপ্রায়। পুরো বনজুড়ে আমার হুকুম চলবে। আমিই বনের অধিপতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবার আসন
পরবর্তী নিবন্ধলোকালয়ে লজ্জাবতী বানর