ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও কঠোর অবরোধের মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় অনাহারের বিস্তৃতি ঘটেছে। ভূখণ্ডটিতে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষুধায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে যাদের অধিকাংশই শিশু। গতকাল বুধবার শতাধিক আন্তর্জাতিক দাতব্য ও মানবাধিকার সংগঠন এ পরিস্থিতি অবসানে বিশ্বের সরকারগুলোরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা গাজায় অবিলম্বে ও স্থায়ী অস্ত্রবিরতি এবং মানবিক ত্রাণ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
রয়টার্স জানিয়েছে, এসব দাবি জানানো বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে ১১১টি সংগঠন। এসব সংগঠন সতর্ক করে বলেছে, গাজার সীমান্তে টন টন খাদ্য, পরিষ্কার পানি, চিকিৎসা সরবরাহ ও অন্যান্য উপকরণ স্পর্শহীন অবস্থায় পড়ে আছে, মানবিক সংস্থাগুলোকে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে প্রবেশ ও বিতরণ করার অনুমতি না দেওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছে না। এদিকে পুরো গাজাজুড়ে ব্যাপক অনাহার ছড়িয়ে পড়ছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সংস্থাগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মার্সি কোর, রিফিউজি ইন্টারন্যাশনাল ও নরওয়েজীয় রিফিউজি কাউন্সিল অন্যতম। সংগঠনগুলো বলেছে, ইসরায়েলি সরকারের অবরোধে গাজার জনগণকে অনাহারে রাখছে। ত্রাণকর্মীরাও খাবার নেওয়ার জন্য একই লাইনে যোগ দিচ্ছে, শুধু তাদের পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছে। সরবরাহ এখন পুরোপুরি শেষ। মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের নিজেদের সহকর্মী ও অংশীদারদের চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখছে। ইসরায়েল সরকারের সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে বিধিনিষেধ, বিলম্ব খণ্ডিতকরণে বিশৃঙ্খলা, অনাহার ও মৃত্যু ঘটছে। সংগঠনগুলো সরকারগুলোকে সব ধরনের আমলাতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার, সব ল্যান্ড ক্রসিং উন্মুক্ত করার, গাজাজুড়ে সবার জন্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার এবং সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত বিতরণ প্রত্যাখ্যান করার ও ‘নীতিগতভাবে জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন মানবিক সাড়া পুনরুদ্ধার করার’ দাবি জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। অবরোধের অবসান ঘটাতে রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই অস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তান্তর বন্ধ করার মতো বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। গাজায় সব ধরনের সরবরাহের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা ইসরায়েল খাদ্য ঘাটতির জন্য দায় অস্বীকার করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে। জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ পদ্ধতি নিরপেক্ষ না হওয়ায় এর তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো।গাজায় ২১ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ ও নির্বিচার গুলিতে প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন বহু মানুষ অনাহারেও মারা যাচ্ছে।