গাজায় হাসপাতালে নির্মম হামলা ‘গণহত্যার’ সামিল

বর্বর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে

| শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

সমগ্র বিশ্ব আজ স্তম্ভিত, ক্ষোভে জ্বলছে বিশ্ববাসী। অবরুদ্ধ গাজায় আলআহলি হাসপাতালে গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ পাঁচশ মানুষ নিহতের ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে বিশ্বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নেতারাও এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ এই গণহত্যাকে ‘বর্বর যুদ্ধাপরাধ’ এবং ‘গণহত্যার’ উদাহরণ বলে উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, এই পশুর মতো আচরণ ও ভয়ংকর অপরাধের মাধ্যমে, ইহুদিবাদী শাসক আবারও সমগ্র বিশ্বের জনগণের কাছে তাদের হিংস্রতা তুলে ধরছে। ইসরাইলি শাসনব্যবস্থা প্রমাণ করেছে যে, যারা যুদ্ধ পরিচালনা করে, তারা আন্তর্জাতিক আইনের নীতি ও নিয়মের প্রতি ন্যূনতম প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় তিনি ‘হতভম্ব’। এ হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়ে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি।

গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) দেওয়া পোস্টে আন্তোনিও গুতেরেস আরও বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইনে সব হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিচার্ড পিপারকর্ন বলেছেন, মাত্রার দিক থেকে এই হামলা নজিরবিহীন। আমরা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাস্থ্যসেবার ওপর ধারাবাহিক হামলা দেখছি। তিনি জানান, গাজার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর ওপর এ পর্যন্ত ৫১ বার হামলা চালানো হয়েছে, আর তাতে ১৫ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত ও ২৭ জন আহত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক আহমেদ আল মান্ধারি জানান, আলআহলি আলআরাবি হাসপাতালে যখন হামলা চালানো হয় তখন সেখানে রোগী, স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত লোকজনও ছিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গাজা ভূখণ্ডের উত্তরাঞ্চলের যে ২০টি হাসপাতাল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে বলেছিল এটি তার একটি। তিনি আরও বলেন, চলমান নিরাপত্তাহীনতা, অনেক রোগীর সঙ্কটজনক অবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স, কর্মী, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিছানা সক্ষমতা এবং বাস্তুচ্যুতদের বিকল্প আশ্রয়ের ঘাটতির মধ্যে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার এই আদেশ পালন করা অসম্ভব ছিল।

হাসপাতালে বোমা হামলার আগে ইসরায়েলি হামলায় আহত শত শত রোগী ও গৃহহীন অসংখ্য বাসিন্দা ‘নিরাপদ’ ভেবে ওই হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো চাপা রয়েছেন অনেকে। হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাসপাতালে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এমন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া ও ফিলিস্তিন। এদিকে তেল আবিব সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ হামলায় উল্টো ইসরায়েলের সাফাই গেয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জো বাইডেনের সঙ্গে বুধবারের বৈঠক বাতিল করে ফিলিস্তিন, মিশর ও জর্ডান সরকার। আমাদের বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বুধবার বলা হয়, গাজা শহরের আহলি আরাবি হাসপাতালে সামপ্রতিক বর্বর বিমান হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী (আইওএফ) দ্বারা নির্বিচারে শত শত নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের প্রধানত নারী ও শিশু হত্যা করা হয়। এই নির্মম হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন যা মানবতার বিরুদ্ধে একটি গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গাজায় ইসরায়েল যে বর্তমান যুদ্ধ চালাচ্ছে তা কেবল অসামঞ্জস্যপূর্ণই নয়, এটি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের সম্মিলিত শাস্তি এবং মানবাধিকারের সমস্ত মৌলিক নীতি এবং আন্তর্জাতিক নাগরিক চুক্তি ও কনভেনশনের লঙ্ঘনের সমতুল্য। বাংলাদেশ বলেছে যে, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চলমান সংঘাতের মূল কারণগুলি সমাধান করার সময় এসেছে। এটা স্পষ্ট যে মর্যাদাপূর্ণ জীবনকে অস্বীকার করা এবং ইসরায়েলি দখলদারিত্বের অধীনে জীবনযাপন এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জোরপূর্বক বসতি স্থাপন এই অঞ্চলে শান্তির দিকে পরিচালিত করবে না। তাই, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি জনগণের স্বনিয়ন্ত্রণের অবিচ্ছেদ্য অধিকারকে আন্ডারলাইন করে। বাংলাদেশ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে এই জঘন্য কর্মকাণ্ডের নিন্দা এবং জরুরিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভূখণ্ডে মানবিক প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে যখন গাজাবাসী আশ্রয় ও চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ঠিক তখন এই বিমান হামলা হয়। এই হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এই অপরাধমূলক কাজের অপরাধীদের অবশ্যই তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে এবং যুদ্ধের শিকার হিসাবে নিরীহ বেসামরিক লোকদের আরও মৃত্যু এবং দুর্ভোগ রোধ করতে বর্বর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে