জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি নিয়ে ইসরায়েল–হামাসের চুক্তির আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আনা প্রস্তাব পাস হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীনের ভিটোর কারণে প্রস্তাবটি আবার ব্যর্থ হয়েছে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্যই প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া, চীন। আর ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল গায়ানা। এ প্রস্তাবে ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে ‘দফায় দফায় আলোচনা করে’ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
প্রস্তাবটি ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব আরও কঠোর হওয়ার নিদর্শন ছিল এবং এ প্রস্তাবেই যুক্তরাষ্ট্র লড়াইয়ে সাময়িক বিরতি নয় বরং বাস্তবিক অর্থে ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল। জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস–গ্রিনফিল্ড ভোটের আগে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছিলেন, এই প্রস্তাব পাস না করাটা ‘ঐতিহাসিক ভুল হবে।’
ওদিকে, জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া ভোটের আগে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেরকে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই প্রস্তাবে ‘অত্যন্ত রাজনীতিকীকরণ’ হয়েছে এবং ইসরায়েলকে গাজার রাফাহ নগরীতে সামরিক অভিযান চালানোর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। এতে ইসরায়েল আরও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অবাধ এখতিয়ার পেয়ে যেতে পারে। নেবেনজিয়া আরও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী অনেক সদস্যই বিকল্প একটি খসড়া প্রস্তাব করেছে। সেই প্রস্তাবটি ভারসাম্যপূর্ণ। ফলে এ প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সমর্থন না করার কোনও যুক্তি নেই। জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, বেইজিং এই বিকল্প প্রস্তাব সমর্থন করে।
তবে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত থমাস–গ্রিনফিল্ড বলেন, এ প্রস্তাবে কিছু খামতি আছে। এতে হামাস আলোচনার টেবিলে থাকা চুক্তি থেকে দূরে সরে যাওয়ার অজুহাত পেয়ে যেতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, কাতারে গাজায় ৬ সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি এবং ৪০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের জেল থেকে ফিলিস্তিনিদের ছাড়া পাওয়া নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা থেকে এখনও চুক্তি হওয়া সম্ভব বলে তিনি বিশ্বস করেন। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবে ব্লিনকেনের পাশাপাশি মিশর এবং কাতারের মধ্যস্থতায় চলা এই যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে সমর্থন জানানো হয়েছে। গাজায় আরও মানবিক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিতে ও বেসামরিকদের সুরক্ষায় বেশি কিছু করতে মিত্র ইসরায়েলের ওপর অনবরত চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সাড়ে পাঁচ মাস ধরে চলা যুদ্ধের এ সময়কালে এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দবন্ধটির বিরোধিতা করে এসেছে এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ডাক দেওয়া সব প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে।
রয়টার্স, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা খসড়া প্রস্তাবটি দেখেছে। প্রস্তাবটিতে বলা হয়েছিল, প্রায় ছয় সপ্তাহ স্থায়ী একটি ‘আশু ও টেকসই যুদ্ধবিরতি’ বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেবে ও মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ সুগম করবে।