ইসরায়েল সীমান্তের কাছে গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রতি ইঞ্চি ভূখন্ডকে পতিত জমিতে পরিণত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ওই এলাকাকে কিল জোনে পরিণত করার জন্য সেনাদেরকে নির্দেশও দিয়েছে ইসরায়েল। খবর বিডিনিউজের।
কৃষিজমি সমতল করে, আবাসিক এলাকা, শিল্প এলাকা গুঁড়িয়ে দিয়ে বাফার জোনের আওতা বাড়িয়ে সেটিকে কিল জোন করছে ইসরায়েল। যেখানে ফিলিস্তিনিরা কেউ পা রাখা মাত্রই ঘাতক বুলেটের নিশানা হচ্ছে। কিল জোনের (হত্যা এলাকা) পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সেনাদের সাক্ষ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য। সেনাদের বয়ান নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ইসরায়েলি অধিকার সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবীণ সেনাদের নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর দ্য পেরিমিটার শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে সোমবার। গাজায় ২০২৩–২৪ সালে বাফার জোনে যে সেনারা ছিল তাদের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। গাজা এবং ইসরায়েলের মধ্যকার সীমান্ত বরাবর উত্তর থেকে দক্ষিণের একটি এলাকায় সেই ২০০০ সালেই বাফার জোন তৈরি করেছিল ইসরায়েল। সেই বাফার জোনের পরিধি ২০১৫ সালে ৩০০ মিটার পর্যন্ত বাড়ায় ইসরায়েল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার আগ পর্যন্ত ইসরায়েল তাদের সীমান্ত বেষ্টনীর ৩০০ মিটারের মধ্যে ফিলিস্তিনিদেরকে ঘেঁষতে দিত না। কিন্তু হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এই এলাকার পরিধি প্রায় ১ কিলোমিটার বাড়ানোর পরিকল্পনা করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এলাকাটির পরিধি ৮০০ থেকে ১৫০০ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তারপর থেকে ইসরায়েলি সেনারা এলাকাটি আরও সমপ্রসারণ করেছে। গত মাসে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ণ শক্তি নিয়ে যুদ্ধ শুরু করার পর বাফার জোনের পরিধি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।
ইসরায়েলের সেনারা বলছে, সীমান্তে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের মতো আরেকটি হামলা যাতে না হয়, সেজন্যই তাদেরকে বাফার জোনের পরিধি এভাবে বাড়াতে বলা হয়েছে। ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম দিকের দিনগুলোতে ইসরায়েল সবকিছু ধ্বংস করে বাফার জোনের পরিধি এক কিলোমিটারের বেশি বাড়ায়। মাঝখানে এবছর জানুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর গতমাসে ইসরায়েল ফের যুদ্ধ শুরু করলে বাফার জোনের পরিধি আরও দ্বিগুণ বাড়ানো হয়। গাজার ভেতরে তিন কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত গড়িয়েছে এই জোন।
গাজার নেৎজারিম করিডর নামের আরও একটি বিস্তীর্ণ এলাকাও ইসরায়েল দখল করেছে। ফলে এই করিডোর এবং বাফার জোন মিলে ইসরায়েলের দখলে এখন চলে এসেছে গাজার অন্তত ৫০ শতাংশ এলাকা।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ এর অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব এ তথ্য জানিয়েছেন। একসময় যে এলাকায় শত–সহস্র ফিলিস্তিনির বাস ছিল, কৃষির জন্য যে এলাকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল–সেটিই এখন ইসরায়েলের বাফার জোন। স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, এক সময়কার জনবসতিপূর্ণ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।