ইসরাইলি বাহিনীর দীর্ঘ আগ্রাসনে গাজায় সৃষ্ট ৫০ কোটির বেশি ধ্বংসস্তূপ সরাতে সময় লাগবে প্রায় ২১ বছর। এতে খরচ হবে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এমনকি থেমে গেছে উপত্যকাটির আগামী ৬৯ বছরের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা। নিউ ইয়র্ক থেকে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ায় দীর্ঘদিন পর ঘরে ফেরার আনন্দ থাকলেও মনে শান্তি নেই গাজাবাসীর। কারণ, ইসরাইলি বর্বরতায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো উপত্যকা। তবে এর মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার বাসিন্দারা। নিউইয়র্ক থেকে এএফপি এই খবর জানিয়েছে। খবর বাসস/বাংলানিউজের।
যুদ্ধবিরতির পর ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে নেমেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তারা বলছেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ শহরের প্রধান রাস্তাগুলো পুনরায় চালু করা। যান চলাচলের জন্য প্রশস্ত রাস্তা তৈরির চেষ্টা চলছে। আপাতত শুধু ধ্বংসাবশেষ সরানো কাজ চলছে, কিন্তু রাস্তা পুরোপুরি পরিষ্কার হচ্ছে না। ভারী যন্ত্রপাতি ছাড়া কাজ করা অসম্ভব। আগামী ১০ দিনের মধ্যে শহরটির রাস্তা–ঘাট পরিষ্কারের পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে রাফার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শহরটির মেয়র।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শহরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। সব কিছু ঠিকঠাক মতো এগোলে দ্রুত পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং যোগাযোগ উন্নয়নের কাজ করা হবে।’ এদিকে জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ৫০ কোটির বেশি ধ্বংসস্তূপ সরাতে প্রায় ২১ বছর সময় লেগে যেতে পারে। খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ইসরাইলি সেনাদের চালানো বর্বরোচিত হামলায় থেমে গেছে উপত্যকাটির আগামী ৬৯ বছরের উন্নয়ন।
১০ বছর লাগবে গাজা থেকে অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে : এদিকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে সেখানে যুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যবহার করা যেসব বোমা অবিস্ফোরিত রয়েছে, সেসব সরানো হবে বড় এক চ্যালেঞ্জ।এতে প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সমপ্রতি জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত সংস্থা (ওসিএইচএ) এমনটি বলেছে। সংস্থাটি বলছে, গাজা পুনর্গঠনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হবে ১৫ মাসের যুদ্ধের পর ফেলে যাওয়া ল্যান্ডমাইন এবং অন্যান্য অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ সরানো। জাতিসংঘসহ অন্যান্য মানবিক সংস্থার সম্মিলিত গোষ্ঠী গ্লোবাল প্রোটেকশন ক্লাস্টারের সামপ্রতিক প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে ওসিএইচএ বলেছে, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে যেসব বিস্ফোরক যুদ্ধাস্ত্র চাপা পড়ে আছে, সেগুলো সরাতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে। এতে খরচ হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
গাজায় প্রায় ৪২ মিলিয়ন টন ধ্বংসস্তূপে বিস্ফোরকের পাশাপাশি অ্যাসবেস্টস, অন্যান্য বিপজ্জনক দূষক পদার্থ এবং মানুষের কঙ্কাল রয়েছে। এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়াচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেন, গাজায় ত্রাণ সংস্থাগুলো খাদ্য সরবরাহ বাড়াচ্ছে। বেকারিগুলো চালু হচ্ছে। হাসপাতালগুলো পুনরায় সচল করা হচ্ছে। মেরামত করা হচ্ছে পানি সরবরাহের লাইনগুলো। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা দপ্তর বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে উপত্যাকাটিতে এ পর্যন্ত ১৬২টি মরদেহ পাওয়া গেছে।