গাজায় খাদ্য গুদামে হামলে পড়েছে দলে দলে ক্ষুধার্ত মানুষ

| শুক্রবার , ৩০ মে, ২০২৫ at ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ

গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি খাদ্য গুদামে দলে দলে ক্ষুধার্ত মানুষ হামলে পড়েছে। ঘটনায় দুইজন নিহত ও আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। খবর বিডিনিউজের।

ঘটনার বিস্তারিত এখনও যাচাইবাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আলবালাহ এলাকার আলঘাফারি গুদামে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে পড়ে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। ময়দার বস্তা ও খাবারের কার্টন নিয়ে যেতে দেখা গেছে বহু মানুষকে।

গুলির আওয়াজও শোনা গেছে। তবে গুলি কোথা থেকে এসেছে বা কারা গুলি ছুড়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ডব্লিউএফপিএর এক বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। টানা প্রায় তিন মাস ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের পর গত সপ্তাহে সামান্য শিথিলতা এলেও, খাদ্য ঘাটতি এখনও তীব্র। ডব্লিউএফপি বলছে, ওই গুদামে আগে থেকেই খাদ্য সহায়তা মজুত করা ছিল বিতরণের জন্য। সংস্থাটি আরও বলেছে, গাজায় অবিলম্বে খাদ্য সহায়তা বিপুল পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন। মানুষকে আশ্বস্ত করার এটিই একমাত্র উপায় যে, তারা অনাহারে মারা যাবে না। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা সীমিত করার ফলে কী বিপর্যয় হতে পারে সে ব্যাপারে আমরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলাম। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার ১২১টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যাতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আটা ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য ছিল। তবে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত সিগরিড কাগ একে ডুবে যাওয়া জাহাজের পর লাইফবোট পাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের একটি বিতর্কিত বেসরকারি সংস্থা চারটি কেন্দ্র চালু করেছে, যেখানে মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদারদের সহায়তায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে জাতিসংঘ অকার্যকর ও অনৈতিক বলে আখ্যা দিয়েছে। গাজা উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বহু ক্ষুধার্ত মানুষ জিএইচএফ এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাবার নিতে ভিড় করছে। তবে মঙ্গলবার দক্ষিণ রাফাহ শহরে জিএইচএফএর একটি কেন্দ্র চালু হওয়ার পরদিন সেখানে মানুষের চাপে অন্তত ৪৭ জন আহত হন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর। এক জ্যেষ্ঠ জাতিসংঘ কর্মকর্তা জানান, হতাশ জনগণ এখন জাতিসংঘের ত্রাণ ট্রাক থেকে পণ্য ছিনিয়ে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য মানবিক চ্যানেলের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে হামাস বাধা দিচ্ছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যেসব ত্রাণ লুট হয়েছে, তার পেছনে মূলত কাজ করেছে অপরাধী চক্র, যাদের ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কেরেম শালোম সীমান্তে কাজ করতে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, সমপ্রতি যুদ্ধবিরতির সময় যে ধরনের ব্যাপক ত্রাণ প্রবাহ দেখা গিয়েছিল, তা পুনরায় চালু করতে পারলেই লুটপাট ঠেকানো সম্ভব হবে এবং গাজা জুড়ে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠিত নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানো যাবে।

ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি দ্যানন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, জাতিসংঘ এখন মাফিয়া সংগঠনের মতো আচরণ করছে এবং জিএইচএফএর সঙ্গে কাজ করা সংস্থাগুলোকে হুমকি দিচ্ছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের নতুন এই ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা মূলত কৌশলগত ত্রুটি রয়েছে।

কারণ, এটি কেবল দক্ষিণ গাজায় কার্যকর। অথচ গাজার অধিকাংশ মানুষ এখন রয়েছে উত্তরে, যেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমমতা ব্যানার্জীর সরকারকে নির্মম আখ্যা মোদীর
পরবর্তী নিবন্ধহালদায় পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ, চলছে সংগ্রহের উৎসব