গাজায় ক্ষুধার্তদের ওপর গুলি চালাতে দেখেছেন নিরাপত্তা ঠিকাদার

| শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৫৪ পূর্বাহ্ণ

গাজায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রসমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে নিরস্ত্র, ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর মেশিনগান দিয়ে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন এক সাবেক নিরাপত্তা ঠিকাদার।বিবিসিকে তিনি জানান, ফিলিস্তিনিরা কোনো হুমকি না হয়েও বারবার গুলির শিকার হয়েছেন। একবার একদল নারী, শিশু ও বৃদ্ধ ধীরে চলার কারণে টাওয়ার থেকে প্রহরী তাদের ওপর গুলি চালান। খবর বাংলানিউজের।

তবে বিতরণকেন্দ্র পরিচালনাকারী গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে। তারা বিবিসিকে জানায়, তাদের সহায়তা কেন্দ্রের আশেপাশে কখনও কোনো বেসামরিক নাগরিক গুলিবিদ্ধ হয়নি। মে মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার কিছু এলাকায় সীমিতভাবে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে জিএইচএফ। এরপর ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে। সহায়তা বিতরণের এই পদ্ধতিকে শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনা করা হয়। কারণ, এতে মানুষকে সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্র পার হয়ে অল্প কিছু স্থানে যেতে বাধ্য করা হয়।

জাতিসংঘ এবং স্থানীয় চিকিৎসকরা বলছেন, জিএইচএফ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের কাছ থেকে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টার সময় ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।

যদিও ইসরায়েল মনে করে, তাদের নতুন এই পদক্ষেপের ফলে হামাসের সাহায্য পাওয়ার পথ বন্ধ হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের একটি দলের ওপর প্রহরীদের গুলি চালানো ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই ঠিকাদার বলেন, একজন ওপর থেকে দাঁড়িয়ে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তাটার দিকে তাকিয়ে জনতার ওপর বারবার ১৫ থেকে ২০টি করে গুলি চালাতে শুরু করেন। একজন ফিলিস্তিনি নিশ্চল হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। এরপর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য আরেকজন বলেন, ‘ধুর, আমি ভাবলাম তুমি একজনকে মেরেছো। ’ আর তারপর তারা এটা নিয়ে হেসে উঠল। ঠিকাদার দাবি করেন, এসব সহিংসতার প্রতিবেদন দিলেও জিএইচএফ তা গুরুত্ব দেয়নি। বরং ঘটনাগুলোকে কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়। জিএইচএফ বলেছে, অভিযোগকারী ব্যক্তি অসন্তুষ্ট সাবেক কর্মী, যাকে অসদাচরণের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে ঠিকাদার দাবি করেন, তিনি পদ ছাড়ার পরও দুই সপ্তাহ বেতন পেয়েছেন।

তিনি জানান, সিসিটিভি ক্যামেরায় সব ঘটনা রেকর্ড হলেও সেগুলো গোপন করা হয়। তার ভাষায়, জিএইচএফের দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ‘জম্বি’ বা ‘মৃত মানুষ’ বলে অবজ্ঞা করত। ঠিকাদার আরও জানান, সহায়তাকেন্দ্রে স্টান গ্রেনেডের আঘাত, পিপার স্প্রের হামলা এবং ভিড়ের চাপায় ফিলিস্তিনিদের আহত হতে দেখেছেন। একবার একজন পুরুষের মুখে পুরো পিপার স্প্রের ক্যান ঢেলে দেওয়া হয়। আরেকবার এক নারী স্টান গ্রেনেডের ধাতব অংশের আঘাতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

এ পরিস্থিতিতে অঙফাম, সেভ দ্য চিলড্রেনসহ ১৭০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা জিএইচএফ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিতভাবে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালায়। তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা নিতে আসা লোকদের ওপর গুলি চালায়নি। জিএইচএফ বলছে, তারা হামাসের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে খাবার বিতরণ করতে পেরেছে। অন্য সংস্থাগুলোর সাহায্য লুট হয়ে গেলেও তারা সফলভাবে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সেখানে অন্তত ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত হয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথম দেশ হিসেবে তালিবানকে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেনে লক্ষ্য অর্জনে পিছু হটবে না রাশিয়া, ট্রাম্পকে জানালেন পুতিন