গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নির্বিচারে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে সারাদেশের মত গতকাল সোমবার চট্টগ্রামে দিনভর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ইসলামী ছাত্রসংগঠন, সামাজিক– সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ছাত্রজনতার ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ইসলামী ছাত্র সংগঠন–প্রতিষ্ঠান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এসব বিক্ষোভ ও সমাবেশে মাঠে নামলে তাতে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের ঢল নামে। এদের মধ্যে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছিল শিশু–নারী–বৃদ্ধরাও। বেলা বাড়তে বাড়তেই উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশের মত চট্টগ্রাম নগরী। বিকাল পৌনে ৫টায় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল বের করে।
এর আগে ফিলিস্তিনিদের আহ্বানে বিশ্বব্যাপী ‘নো স্কুল, নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সকালে চট্টগ্রাম বিশ্বাবিদ্যালয়ে জিরো পয়েন্টে মিনার নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীতে সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাক্তার–শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সকালে নগরের ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ‘মজলুম গাজাবাসীর ডাকা বিশ্বব্যাপী হরতালে’র সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। সকাল ১১টায় সরকারি মহসিন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে, একই সময়ে সরকারি কর্মাস কলেজ, হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, কাপাসগোলা মাদ্রাসা থেকে কাপাসগোলা আদর্শ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, দুপুর দেড়টায় আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল বের করে আযাদ ফিলিস্তিন আন্দোলন। দুপুর ২টায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নগরের দুই নম্বর গেট বিপ্লব উদ্যানের সামনে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইনকিলাব মঞ্চ ও হেফাজত ইসলামের পাঁচলাইশ থানা শাখার উদ্যোগে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল জিইসির দিকে রওয়ানা হয়। এতে সাধারণ মানুষসহ হাজারেরও বেশি শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
বেলা ৩টায় ওলামা জনতা ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বেলা সাড়ে ৩টায় চেরাগী পাহাড় থেকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ বিক্ষোভ মিছিল বের করে, বেলা সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিকাল সাড়ে ৩টায় দেওয়ানহাট মোড়ে ইসলামী আন্দেলন বাংলাদেশ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এছাড়াও ক্যামব্রিজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটহাজারী সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস–বর্জন করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল বের করে। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও একই ধরনের সংহতি ও কর্মসূচি দেখা গেছে। এসময় তারা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা’, ‘বয়কট ইসরায়েলি পণ্য’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
সকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক মিছিল হয়। এতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ছাত্রজনতা অংশ নেন। এই মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মিছিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কুশপুত্তুলিকা দাহ করেন শিক্ষার্থীরা।
‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদ সারা বিশ্বের মতো চট্টগ্রামেও পালিত হয়েছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। চট্টগ্রামের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয়নি। হয়নি পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও।
ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। ধর্মঘট আহ্বানকারীদের আশা, আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার প্ল্যাটফর্মগুলো এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে বৈশ্বিক এই ধর্মঘটের ডাক দেয়।
জানা গেছে, ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালিত হয়। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও সকাল থেকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন ও রাজনৈতিক দল গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে।