ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ক্রমাগত বোমা হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুল, এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রও। মৃতের সংখ্যা অর্ধলাখ ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। এই হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি করেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিভিন্ন দেশের মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষও গভীরভাবে শোকাহত ও ক্ষুব্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে প্রতিবাদ, মানবিক সহানুভূতি প্রকাশ। এমনকি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের তারকারাও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলিয়েছেন। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ফিলিস্তিনের পতাকার ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘করুণ। ওহ আল্লাহ, আপনি তাদের রক্ষাকর্তা, সাহায্যকারী ও শক্তিদাতা হিসেবে কাজ করুন।’ অন্যদিকে, জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ গাজার ধ্বংসস্তূপের ছবি পোস্ট করে আবেগঘন প্রার্থনা জানান, ‘হে আল্লাহ, দয়া করে সাহায্য করুন। হে রাহমানুর রাহিম, দয়া করে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষাকর্তা। দয়া করে তাদের রক্ষা করুন ও বিজয়ী বানিয়ে দিন। হে রব, এটা সহ্য করা যাচ্ছে না। আপনি আল–আহাদ, আপনি আস–সামাদ। হে আল্লাহ, দয়া করে রক্ষা করুন।’ এদিকে আগামী ১২ এপ্রিল ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে আরেকটি কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিও বার্তায় এ কর্মসূচির কথা জানিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘আগামী ১২ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৩টায় শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে মার্চ ফর গাজা শিরোনামে একটি কর্মসূচি আয়োজিত হতে যাচ্ছে। আসুন আমরা সবাই মিলে সর্বস্তরের মানুষ এই বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করি। এবং ফিলিস্তিনিবাসীর প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন পুরো বিশ্বকে জানিয়ে দেই।’ জাতীয় দলের অন্যতম ক্রিকেটার মেহেদী হাসান মিরাজ লিখেছেন, ‘গাজার আকাশ আজও বারুদের গন্ধে ভারী। গাজার আকাশ আজ অন্ধকার। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি। নিস্তব্ধ শিশুরা কাঁদছে নিঃশব্দে। প্রতিটি কান্না প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমাদের হৃদয়ে। আসুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলাই, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই, আর গাজার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি।’ তাসকিন আহমেদ ও নূরুল হাসান সোহানও ছিলেন ফেসবুকে সরব। ২০২০ সালে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক আকবর আলী তার প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়, এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও সত্য, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের করার কিছু নেই। পুরো বিশ্ব এই গণহত্যার জন্য দায়ী থাকবে বিশেষ করে আরবসহ মুসলিম বিশ্ব, যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও চুপ করে আছে। হে আল্লাহ, গাজাসহ বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানকে আপনি কুদরতি শক্তি দ্বারা হেফাজত করুন।’ জাতীয় দলের উদীয়মান ক্রিকেটার নাহিদ আরও সরাসরি ভাষায় বলেন, ‘এই নিষ্ঠুরতার ভার আমাদের সবার ওপর। একদিন আমাদের সবাইকে ইতিহাসের কক্ষে দাঁড়াতে হবে।’ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এই প্রতিক্রিয়া শুধু আবেগপ্রবণ অবস্থান নয়, বরং এটি এক ধরনের নৈতিক প্রতিবাদ একটি মানবিক আহ্বান। ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখদের কণ্ঠে উঠে আসা এই বেদনা কেবল গাজার মানুষ নয়, বরং সমগ্র বিশ্বে শান্তিকামী মানুষের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।