আমার আব্বাকে দেখতাম গাছ লাগাতে। আব্বা তাঁর জীবনে যত গাছ লাগিয়েছেন। সব গাছই ফলবান বলবান হয়েছে। যে আমটি খেতে সুমিষ্ট সেটার আঁটি আম্মাকে বলতেন রাখতে। সেরকম তালবীজ কাঁঠাল পেঁপে সুপারি নারকেল নানাবিধ ফলজ গাছ আব্বার হাতে ফলেছে। আব্বা কতো যত্নে তা রোপন করতেন। সেটা হোক রাস্তার পাশে পতিত ভিটায় কাছারি উঠোন গোয়ালঘরের পাশে সামনের বড়পুকুরের কিনার বা পিছনের পুকুরপাড়। যেখানে সেখানে। এক বিঘত জায়গাও আব্বা খালি পড়ে থাকতে দিতোনা। সুলতানের বাপের বিশাল ভিটায় আব্বার লাগানো কত দামীদামী গাছ। অর্জুন মেহগনি চাপালিশ আম জাম কাঁঠালগাছ। এক একটা গাছ অনেক বছরের পুরনো। লম্বায় আকাশছোঁয়া। সব কেটে উজাড়। আর নতুন করে কোনো গাছই লাগানো হয়নি। কাছারি উঠোনের গাছগুলোও উজাড় করেছে। কত যত্নে আতা গাছ তেজপাতা গাছ জাম্বুরা গাছ লাগিয়েছে। সব নিধন। এক একটা গাছ এক একটা মায়ার আঁকড়। কিছুই রক্ষা পায়নি। প্রয়োজন মানুষকে মায়া ছাড়তে বাধ্য করে। এটা জাস্ট একটা এক্সামপল। আমার বাবারটা দিয়ে শুরু করলাম। এরকম হাজারো বাবার গল্প আাছে। তাঁরা গাছ লাগাতেন মৌসুমে মৌসুমে। সে গাছেরা ছায়া দিত মায়া দিত, ফুল দিত ফল দিত। জীবনের অনেক অর্থকরী যোগানও দিত। কিন্তু আমাদের বাবার পরের প্রজন্ম তাদের সন্তানেরা গাছ কেটেছে লাগায়নি একটাও। লাগালে আজ পরিবেশ এত বিপর্যয় এর মুখে পড়তো না। আমাদের বাবারা মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজিতে প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়েছে। আর তাদের সন্তানেরা শুধুই নিধন করেছে। পাহাড় কেটেছে বৃক্ষ উজাড় করছে। পুকুর জলাশয় ভরাট করেছে। আধুনিকতার নামে চরম নৈরাজ্য শুরুর এ যাত্রাপথ ঠেকানো না গেলে আমরা আরও বিরাট হুমকির সম্মুখিন হবো। মরুভূমির তাপ চাপ সব আমাদের শ্যামল বাংলায় আসন গেড়ে বসবে। চট্টগ্রাম নগরীর কত শত পুকুর ভরাট হয়েছে তা আমরা জানি। চৌধুরী হাটের রাস্তার পাশের সে বিশাল পুকুরগুলো আর নেই। কিংবা বায়েজিদ এর পাহাড়ের বুক চিরে পোর্ট কানেকটিং রোডের দুপাশের পাহাড়গুলো এখনো কত শোভা বর্ধন করছে। ওদিকটায় গেলেই চোখ জুড়ায়। পাহাড় কেটে নগর সভ্যতায় সুযোগ সুবিধা বাড়ানো কতোটা পরিবেশ বান্ধব তা জানি না। যা কিছুই পরিবেশের জন্য অকল্যাণকর তা কেন বাস্তবায়ন হবে তাও আমার ছোট মাথায় ধরে না। কেন মানুষ এত বেপরোয়া হয়ে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। এতে কার লাভ কার ক্ষতি? আমার সবুজ শ্যামল নাতিশীতোষ্ণ দেশটায় হিট এলার্ট চলছে।
আহারে সোনার বাংলাদেশ আমার। আমাদের বাবাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেনি বলেই এ বিপর্যয়। আমাদের শুধুই পাওয়ার লোভ। পরিবেশ প্রতিবেশ রসাতলে যাক তাতে আমার কী? এ চিন্তাভাবনা থেকে না রের হতে পারলে আমরা আরও ভরাডুবিতে তলিয়ে যাব। আসুন সবাই মিলে গাছ লাগাই। পরিবেশ বান্ধব উপাদান সমূহ রক্ষা করি। তাহলেই আমরা সুস্থ সুন্দর জীবনের অধিকারী তো হবোই। সাথে সাথে আমার সোনার বাংলাদেশ সবুজ অরণ্যে সুশোভিত হবে অচিরেই।