নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ গাউছিয়া আবাসিকের বাসিন্দাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে বোতলজাত এলপি গ্যাসের ক্রস ফিলিং। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কখনো দিনে, কখনো রাতে ক্রস ফিলিং করছে একটি সিন্ডিকেট। চলতি বছরের শুরুতে দৈনিক আজাদীর অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও করোনাকালীন সাধারণ ছুটির মধ্যে পুনরায় সচল হয় ক্রস ফিলিং। আগের মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত সিলিন্ডারগুলোও ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় লোকজনকে ম্যানেজ করেই ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। তবে বিস্ফোরক অধিদপ্তর বলছে, জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট না পাওয়ায় চাইলেই অভিযান চালানো যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি আজাদীতে ‘বোতলজাত গ্যাসের বিপজ্জনক ক্রস ফিলিং; নগরীতে জড়িত ১০ সিন্ডিকেট, ঝুঁকিতে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের অভিযান-পরবর্তী বেশ কয়েকদিন বন্ধ থাকলেও পুনরায় বেপরোয়া হয় এসব ক্রস ফিলিং কারখানা।
জানা যায়, মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ সংলগ্ন গাউছিয়া আবাসিকের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জায়গা ভাড়া নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বোতলজাত এলপি গ্যাসের ক্রস ফিলিং চালিয়ে আসছিল ফজলুল কাদের-সৌরভ সিন্ডিকেট। এ নিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ওইদিন বিকেলে ফজলুর ক্রস ফিলিং কারখানায় অভিযান চালায় এনএসআই, পুলিশ ও বিস্ফোরক অধিদপ্তর। অভিযানে পুলিশের জব্দ তালিকা মোতাবেক বিভিন্ন সাইজের ৪২৬টি খালি ও ভরা সিলিন্ডার এবং এলপিজি সিলিন্ডারবাহী একটি পিকআপ জব্দ করা হয়।
অভিযান শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক মেহেদী ইসলাম খান বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় রৌফাবাদ এলাকার কেরামত আলীর ছেলে ইব্রাহিম ই মুকিব, মোস্তফা মিয়ার ছেলে বেলাল হোসেন এবং ক্রস ফিলিং প্রতারক ফজলুকে আসামি করা হয়। তবে জামিনে এসে পুনরায় ক্রস ফিলিং করছেন ফজলু।
সম্প্রতি দেশে আসেন গাউছিয়া আবাসিকের বাসিন্দা দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ জুয়েল। গাউছিয়া আবাসিকে তার পৈত্রিক বিল্ডিংয়ের পাশে ফজলুর ক্রস ফিলিং কারখানা। জুয়েল ফেসবুকে ক্রস ফিলিং কারখানাটির কার্যক্রম বেশ কয়েকবার লাইভ দিয়েছেন। ১৭ ডিসেম্বর নিজের ফেসবুক একাউন্টে লাইভে তিনি লেখেন, ‘আমরা প্রবাসীরা কি আমাদের দেশের আইনের উপর ভরসা করতে পারি না? এত লাইভ দিচ্ছি প্রসাসনের নজরে কি আসে না? গাউছিয়া আবাসিকে অভিযান হলো, নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা হলো, কিন্তু ক্রস ফিলিং বন্ধ হলো না। আবাসিক এলাকায় এই ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক ক্রস ফিলিং হলে কাদের সুবিধা? গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে বা কারা নেবে? রাতভর ক্রস ফিলিং করে সকালে গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে যাওয়া হয়। আগের মামলায় আলামত হিসেবে জব্দকৃত সিলিন্ডারগুলোও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ক্রস ফিলিংয়ে। মাননীয় পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিস্ফোরক অধিদপ্তরসহ গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইছি। বাসার সামনেই গ্যাস সিলিন্ডারের বিপজ্জনক ক্রস ফিলিংয়ের কারণে আমাদের পরিবারকে নিয়ে খুবই আতংকে দিন কাটাচ্ছি।’
এই লাইভের লিংক সিএমপি কমিশনারের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে তিনি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। প্রবাসী মোহাম্মদ জুয়েল বলেন, আমার বাসা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায়। কিন্তু লাগোয়া পাশের প্লটে ক্রস ফিলিং চলছে। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কিন্তু প্রশাসন কেন এগুলো বন্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না জানি না। মাঝেমধ্যে পুলিশ এলে তারা পালিয়ে যায়। চোর-পুলিশ খেলা চলে এখানে। অবৈধ এই ক্রস ফিলিং কারখানাটি বন্ধে সিএমপি কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এই প্রবাসীর ফেসবুক লাইভ দেখে পুনরায় সরেজমিনে গাউছিয়া আবাসিকে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাইফুলের বোনের প্লটের এক কোনায় টিন শেড কারখানাটির বাইরের চারদিকে এখন উঁচু করে স্টিলের ঘেরাও দেওয়া হয়েছে। লোহার বড় গেট ভেতর থেকে সবসময় তালাবদ্ধ থাকে।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাত ১০টার পর থেকে শুরু করে সকাল ৬টা পর্যন্ত ক্রস ফিলিং করা হয়। সকালে ট্রাকে করে সিলিন্ডারগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দিনে-রাতে ক্রস ফিলিং করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে বিস্ফোরক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন আজাদীকে বলেন, আজাদীর প্রতিবেদনের পর আমরা অভিযান চালিয়ে ফজলুর ক্রস ফিলিং কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মামলাও করেছি। এখন পুনরায় ক্রস ফিলিং কাজ চালু করেছে ফজলু। আমরা অভিযানের উদ্যোগও নিয়েছি। কিন্তু আমাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নেই। অভিযানের জন্য জেলা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করতে হয়। জেলা প্রশাসন থেকে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া গেলে যেকোনো সময় অভিযান চালাব।