গর্ভবতী নারীদের বন্ধু

দশ বছরে তিন হাজার শিশুর জন্মদানে সেবা দিয়েছেন ‘মেম্বার আপা’

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৮:০৮ পূর্বাহ্ণ

নাইক্ষ্যংছড়িতে গর্ভবতী নারীদের সেবায় স্থানীয় মানুষের ভরসার স্থল হয়ে উঠেছেন এক নারী। পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে ছুটে গিয়ে প্রসবকালীন বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা এবং পরামর্শ দিয়ে গর্ভবতী নারীদের বন্ধুর খ্যাতি পেয়েছেন। তিনি স্থানীয় নাইক্ষ্যংছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য রাশেদা বেগম। দীর্ঘ দশ বছরে অন্তত তিন হাজার শিশুর জন্মদানে ধাত্রী হিসেবে সেবা দিয়েছেন স্থানীয়দের কাছে ‘মেম্বার আপা’ হিসেবে পরিচিত এই নারী।

স্থানীয়রা জানান, পার্বত্য জনপদ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাটি মিয়ানমার সীমান্তবর্তী। এখানে দুর্গম ও পাহাড়ে বসবাসকারী গর্ভবতী নারীদের দুঃসময়ের সাথী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে কাজী রাশেদা বেগম। পেশায় তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি। সন্তান জন্মদানে ধাত্রী হিসেবে সহায়তা করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে সূর্যের হাসি ক্লিনিক থেকে তার ধাত্রী বিদ্যার হাতেখড়ি। ধাত্রী পরিচিতি ২০১৯ সালে তাকে জনপ্রতিনিধি হতে সহায়তা করেছে। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার।

স্থানীয় বাসিন্দা রুনা আক্তার, আইমান তন্নিসহ একাধিক নারী জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের মসজিদ ঘোনা, বিছামারা, চাকঢালা, আশারতলীসহ বিভিন্ন গ্রামের উপকারভোগী নারীদের সংখ্যা কম নয়। দিনে বা রাতে যখনই মুঠোফোনে তাকে খবর দেওয়া হয় ছুটে যান গর্ভবতী নারীর সেবায়। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পরও থেমে যায়নি রাশেদার মাতৃসেবা। বরং জনসম্পৃক্ততার কারণে বেড়েছে তার মাতৃসেবার পরিধি। বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে অসহায় দরিদ্র নারীরা হাসপাতালে যেতে অনিহা প্রকাশ করেন, সেখানে রাশেদা ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। ইতিমধ্যে গর্ভবতী নারীদের সেবায় স্থানীয় মানুষের ভরসার জায়গা দখল করে নিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য গর্ভবতী নারীদের বন্ধু খ্যাতি পাওয়া ধাত্রী রাশেদা বেগম বলেন, গর্ভবতী নারীদের সেবা করতে ভালোবাসি। অনেকে ধাত্রীগিরিকে পেশা হিসেবে নিলেও আমি নিয়েছি সেবা হিসেবে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত সবগুলো ডেলিভারি তিনি নরমাল করতে পেরেছেন। কখনো কোনো দুর্ঘটনার শিকার হননি। জটিল রোগী হলে নিজ খরচে স্বাস্থ্য বিভাগের দ্বারস্থ হন বলেও জানিয়েছেন এ সেবিকা।

বিষয়টি নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দ্বিতীয় ময় চাকমা বলেন, জনপ্রতিনিধি হয়েও রাশেদা গ্রামের গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি করানোর জন্য তাদের প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। জন্ম মৃত্যু ও মাতৃ মৃত্যুহার কমলে পরিবার সুস্থ থাকে। এতে পরিবারের উন্নতির পাশাপাশি দেশের উন্নতি হয়। এজন্য সারাদেশের ন্যায় পাহাড়ি অঞ্চলেও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির জন্য ধাত্রীসহ স্থানীয় মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজ চলমান রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাভার্ডভ্যানের সঙ্গে বেল্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধসাগর ও নদীর প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারে ক্লিয়ার বোট নিও