গরু-ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য

কোরবানিতে পশুর কোনো সংকট হবে না

| শুক্রবার , ১৭ জুন, ২০২২ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গরু-ছাগলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বৈশ্বিক অবস্থানে বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ছাগলের সংখ্যা, মাংস ও দুধ উৎপাদনের দিক থেকে বৈশ্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাগলের দুধ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ।
২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশেই গবাদিপশুর লালনপালন বাড়তে থাকে। গরু ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) কৃষিশুমারির প্রাথমিক ফলাফলে জানা যায়, এক যুগের ব্যবধানে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। গরুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ লাখ, আর ছাগল বেড়েছে প্রায় ৬১ লাখ।
বিবিএসের শুমারি অনুযায়ী, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ ১৪ হাজার ১৪৪। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৫৭ হাজার ৮৫৩। এক যুগের ব্যবধানে গরু বেড়েছে ৪০ লাখের বেশি। অন্যদিকে দেশে বর্তমানে ছাগলের সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ২০০। এক যুগ আগে ছাগলের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৯।
বিবিএসের কৃষি শাখার পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ পত্রিকান্তরে বলেন, দুটি শুমারি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক যুগের ব্যবধানে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। এর মানে, দেশ পশুসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।
গরু-ছাগল ছাড়াও বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে ভেড়া ও মহিষের হিসাবও দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ভেড়া উৎপাদন বেশ বেড়েছে। এর ফলে ভেড়ার সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৬১৯ হয়েছে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭। অবশ্য সরকার ভেড়া উৎপাদনে খামারিদের উৎসাহিত করতে নানা প্রকল্প নিয়েছে। অন্যদিকে মহিষের সংখ্যাও বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি। দেশে এখন ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৪০টি মহিষ আছে। ২০০৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজারের মতো। সব মিলিয়ে সারা দেশে দুধ দেয় এমন গরু, মহিষ ও ছাগল আছে ১৮ লাখের মতো। এক যুগের ব্যবধানে হাঁস-মুরগি, পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখপাখালি পালনও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। দেশে প্রায় ১৪ কোটির বেশি দেশি ও ব্রয়লার মুরগি আছে। হাঁস আছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এক যুগে ব্যবধানে হাঁসের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
অন্যদিকে, আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে দেশের নানা অঞ্চল থেকে প্রচুর গরু আসতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। ভারত, নেপাল এবং মায়ানমারের কিছু গরুও ঠাঁই পেয়েছে কয়েকটি খামারে। ইতোমধ্যে বেচাকেনাও শুরু হয়েছে। তবে এখনো বাজার জমে উঠেনি। এবারও অনলাইন বাজার বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গরু ছাগলের বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ করে শত শত গরু ছাগল বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত দুই বছর ধরে চলে আসা অনলাইন বাজারের ধারণা স্থায়ী অস্থায়ী গরু ছাগলের বাজারে প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, শুধু কোরবানি ঈদের আগে দেশে ২০ থেকে ২২ লাখ গরু-ছাগল বৈধ-অবৈধ পথে বাংলাদেশে আসত। সারা বছরে এই সংখ্যা ৩০ লাখে ছুঁয়ে যেত। ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার পর দেশে প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে গবাদিপশুর খামার বাড়ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে এখন খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। গত তিন বছরে দেশে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ লাখ। পাশাপাশি মহিষের উৎপাদনও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
চার বছর আগেও শুধু কোরবানির ঈদের সময় প্রায় ২২ লাখ গরু-ছাগল ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসেছিল। গত ঈদে এসেছিল মাত্র দেড় লাখ। গত তিন বছরে চিত্র এমনই পাল্টেছে যে গত কোরবানির ঈদের হাটে প্রায় ১২ লাখ গরু-ছাগল অবিক্রীত ছিল। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেখতে পেয়েছি, গবাদিপশু পালনে দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হয়। একই সঙ্গে দেশের মাংসের চাহিদা মেটে, বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হয়। ফলে গবাদিপশুর সংখ্যা বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি, বিশেষত গ্রামীণ অর্থনীতিকে বদলে দিচ্ছে।’ মোট কথা, চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। প্রচুর পশু রয়েছে। এর বাইরে দেশের নানা অঞ্চল থেকে পশু আসতে শুরু করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা