গরু আসছে, সংকট হবে না

খুঁটি-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সহনীয় থাকবে দাম ।। চসিকের মনিটরিং টিম গঠন ।। প্রথম দিন ক্রেতার চেয়ে কৌতূহলীদের ভিড় বেশি

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ জুলাই, ২০২১ at ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ

বিধি-নিষেধ বহাল থাকায় নির্দিষ্ট দিনে কোরবানি পশুর হাট শুরু হবে কীনা শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা কেটেছে। গতকাল জিলহজ্জ মাসের প্রথম দিনেই নগরে ছয়টি পশুর হাটের যাত্রা শুরু হয়েছে। একটানা চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত।
প্রথমদিন হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে আসা গরু নামাতে দেখা গেছে। পথেও শত শত গরুবাহী ট্রাক থাকায় এবার গরু সংকট হবে না বলে জানান বেপারিরা। বাজারে খুঁটি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দামও সহনীয় থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। এদিকে গতকাল বিকিকিনি তেমন হয়নি। ক্রেতার আনাগোনাও ছিল কম। কয়েকটি বাজারে কৌতুহলী লোকজনের ভিড় ছিল। এদের বেশিরভাগের মুখে ছিল না মাস্ক। এর মধ্য দিয়ে প্রথমদিনেই উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ছয়টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে বাজারগুলোর ইজারাদাতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আজ থেকে প্রতিটি বাজার ঘুরে দেখবেন টিমের সদস্যরা। একইসঙ্গে আজ-কালের মধ্যে হাটগুলোতে বসবে ব্যাংকের বুথ। থাকবে জাল নোট শনাক্তের মেশিনও। এছাড়া শক্ত নজরদারি থাকবে জেলা প্রশাসন ও সিএমপির।
নগরে বসা ছয় পশুর হাটের তিনটি অস্থায়ী। এগুলো হচ্ছে কর্ণফুলী গরু বাজার (নুর নগর হাউজিং এস্টেট), সল্টগোলা রেলক্রসিং সংলগ্ন বাজার এবং ৪১নং ওয়ার্ডস্থ বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টি কে গ্রুপের খালি মাঠ। এছাড়া আছে তিনটি স্থায়ী পশুর হাট। হাটগুলো হচ্ছে সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার।
গতকাল সাগরিকা ও বিবিরহাট পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, সাগরিকা গরুর বাজারে ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙ্গানোর কাজ শেষ। লাইট লাগাতে দেখা গেছে সাগরিকা বাজারে। কয়েকজন বেপারির সাথে কথা কথা বলে জানা গেছে কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কুমিল্লা, নাটোরসহ অন্যান্য এলাকা থেকে তারা গরু নিয়ে এসেছেন।
সাগরিকা বাজারে কথা হয় বেপারি আরিফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি এসেছেন রাজশাহীর চন্দ্রপুর থেকে। জনালেন মাঝারি সাইজের গরুর দাম ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বড় সাইজের গরু তিন লাখ টাকা থেকে শুরু।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বেপারি জানান, প্রতিবছর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ইজারাদারদের পক্ষ থেকে স্থাপিত খুঁটির (ব্যবসায়ীদের ভাষায় খাইন। আকারভেদে এসব খাইনে ৯ থেকে ১৫টি গরু রাখা যায়) মাত্রাতিরিক্ত দাম আদায় করা হয়। ফলে মূল দামের সাথে অতিরিক্ত খরচের লাগাম টেনে ধরতে বাড়ানো হয় গরুর মূল্য। অর্থাৎ খুঁটিবাণিজ্যের মাশুল গুনতে হয় ক্রেতাদের। অথচ নিয়ম হচ্ছে, ইজারাদারগণ হাছিলের অর্থই কেবল আদায় করতে পারবেন। কিন্তু তবু তারা খুঁটির মূল্যও নেন। তাই পশুর দাম সহনীয় রাখতে খুঁটি বাণিজ্য রোধে নজর দেয়া উচিত।
সাগরিকা পশুর হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রথমদিন বেচাবিক্রি হয়নি। অবশ্য প্রতিবছর প্রথম বাজারে বিকিকিনি তেমন হয় না। চট্টগ্রামের লোকজন শেষ দিকে গরু কিনেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু আসছে। আজকেও ৪০ গাড়ি গরু এসেছে। টাঙ্গাইল, যশোর, বেনাপোল এসব এলাকা থেকেই গরু বেশি আসছে। যেহেতু লকডাউন শিথিল হচ্ছে তাই আরো গরু আসবে। আশা করছি গতবার শেষ দিকে যে সংকট হয়েছিল এবার তেমনটি হবে না। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতেও সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিবিরহাট গরু বাজারের ইজারাদারের পার্টনার মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, লকডাউনের কারণে বাজার বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় উত্তরবঙ্গের বেপারিরাও দ্বিধা-দ্বন্ধে ছিলেন। তাই অন্য বছর প্রথমদিন যেভাবে গরু আসতো এবার সেভাবে আসেনি। এখন লকডাউন শিথিলের খবরে বেপারিরা আসার কথা জানিয়েছেন। কুষ্টিয়ার বেপারিরা গরু নিয়ে আজ (গতকাল) রওয়ানা দিয়েছেন। আগামীকাল (আজ) তারা এসে পৌঁছুবেন। অবশ্য ইতোমধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আট গাড়ি গরু এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যে আরো আসবে। স্থানীয় গরুও আসছে। সবমিলিয়ে আশা করছি এবার গরুর সংকট হবে না।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, প্রতিটি বাজারের জন্য একটি করে পৃথক ছয়টি টিম গঠন করেছি। তারা নিয়মিত বাজারগুলো মনিটরিং করবেন। বাজারে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হচ্ছে কীনা তা দেখবেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানা না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিরোধিতার পরও সিআরবিতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে সাধারণ রোগী ভর্তি সীমিত রাখাসহ কয়েক দফা সিদ্ধান্ত