গরুর রশি নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই ভাই খুন

গ্রেপ্তার ঘাতক পিতা-পুত্র

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় গরুর রশি খুলে নেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে দুই ভাই খুন হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পশ্চিম খুরুশিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, জালাল উদ্দিন (২৫) ও তাঁর ছোট ভাই কামাল হোসেন (২২)। তারা একই এলাকার জহির আহমেদের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও চারজন। তাঁরা হলেন, নিহতদের প্রতিবেশী মো. ইদ্রিছ এবং তাঁর তিন ছেলে মো. বাদশা, সালাউদ্দিন ও মো. রানা। ঘটনার পর অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে ধরে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। তাঁরা হলেন শফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে খোরশেদ আলম। তাদের বাড়িও ওই এলাকায়। গ্রেপ্তার ঘাতক পিতা-পুত্রকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার দিনগত রাত দুইটার দিকে নিহতদের বাবা জহির আহমেদ বাদী হয়ে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় খোরশেদ আলমকে প্রধান করে ৪ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার দু’জনকে শনিবার সকালে জেল হাজাতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে নিহত জালাল ও কামালের নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- জালাল উদ্দিন শুক্রবার সকালে বাড়ির কাছে ক্ষেতের পাশে তাঁর গরু বেঁধে দিয়ে আসেন। দুপুরের দিকে গিয়ে দেখেন, গরুর গলার রশি কারা খুলে নিয়ে গেছে। খুঁজতে গিয়ে দেখেন, রশিটি শফিকুল ইসলামের হাতে। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতন্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতিতে আঘাত লেগে শফিকুলের মাথা ফেটে যায়। এর জেরে বিকেলের দিকে শফিকুল ইসলামের তিন ছেলে খোরশেদ আলম, মোরশেদ আলম ও সাইফুল মিলে জালাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালান। এ সময় তাঁকে বাঁচাতে ভাই কামালসহ প্রতিবেশী ইদ্রিছ ও তাঁর সন্তানেরা এগিয়ে আসেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে জালাল ও কামাল আহত হন। এ ছাড়া মারধরে আহত হন ইদ্রিছ ও তাঁর তিন ছেলে। সবাইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জালাল ও কামালকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের চিকিৎসক তাহেরাতুল আশরাফী বলেন, হাসপাতালে আনার আগে দুজন মারা গেছেন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদেরও বুকের বাম পাশে জখম রয়েছে। এরমধ্যে ইদ্রিছের অবস্থা আশংকাজনক। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জালাল ও কামালকে হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা নেয়া হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত পিতা শফিকুল ইসলাম ও তাঁর ছেলে খোরশেদ আলমকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে। হত্যা কাজে ব্যবহৃত ছুরিটাও জব্দ করা হয়েছে। পলাতক আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার নিহত জালাল ও কামালের লাশ আনা হলে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নামে। নিহত জালালের স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। লাশ দুটি বাড়ির আঙ্গিনায় নিয়ে আসা হলে নিজ কন্যা সন্তানকে নিয়ে স্বামীর লাশের পাশে বসে স্ত্রী এবং তাদের পিতা-মাতার কান্নার আহাজারির দৃশ্য উপস্থিত সকলকে কাঁদিয়েছে।

স্থানীয় দোকানদার নুরুল কবির বলেন, সামান্য একটি রশি নিয়ে এমন হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায় না। আমরা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এবং দ্রুততম সময়ে যেন পলাতক বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে গ্যাস সেক্টরে স্বস্তি
পরবর্তী নিবন্ধপ্রক্সিতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, ভাইভায় ধরা