দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। এই গরমে শিশুদের মাঝে দেখা দিয়েছে ভাইরাল জ্বর, ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট) ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ। নিউমোনিয়া তো আছেই। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে বলে বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক সূত্র জানিয়েছে।
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন- ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট), ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া, সবকয়টি রোগই ভাইরাস জনিত। তবে নিউমোনিয়ার প্রকোপ শিশুদের মাঝে সারা বছর কম-বেশি দেখা গেলেও ব্রঙ্কিউলাইটিসের প্রকোপ তেমন থাকে না। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের সময় আরএসবি (রেসপিরেটরি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত এই রোগটির প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়। আর গরমে যোগ হয়েছে ভাইরাল জ্বর ও ডায়রিয়ার প্রকোপ। ভাইরাল জনিত এসব রোগে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই বললেও এ নিয়ে অভিভাবকদের সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু-স্বাস্থ্য বিভাগে অন্য সময় দৈনিক ৪ থেকে ৫ জন শিশু ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট) রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হতো। কিন্তু গত বেশ কিছুদিন ধরে এই রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তির হার স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া জ্বর, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিছুদিন আগে ওয়ার্ডে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ শিশু রোগী ভর্তি হলেও এখন এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনে।
শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তিনটি সাধারণ ইউনিটের ৬৫ শয্যা ও বিশেষ চারটি ইউনিটসহ শিশু ওয়ার্ডের মোট ১৩২ শয্যার বিপরীতে গতকাল মোট দেড়শ শিশুরোগী চিকিৎসাধীন। আর ভর্তিকৃত শিশুরোগীদের মাঝে ব্রঙ্কিউলাইটিস, নিউমোনিয়া, ভাইরাল জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বলে জানান শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ। অবশ্য, স্বাভাবিক সময়ে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ১৩২ শয্যায় দুইশ থেকে আড়াইশ রোগী ভর্তি থাকে। কিন্তু করোনার কারণে রোগীর সংখ্যা এখন তুলনামূলক কম বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
২৫০ শয্যার বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে বুধবার (গতকাল) ১৬০ জন শিশু রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানান হাসপাতালটির শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ভর্তি রোগীদের মাঝে ভাইরাল জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। জ্বরে আক্রান্ত ৪০ জন এবং ডায়রিয়া নিয়ে ৩৪ জন শিশু রোগী চিকিৎসাধীন। অন্যরা ব্রঙ্কিউলাইটিস (শ্বাসকষ্ট) ও নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। গরমে এবং ঋতু পরিবর্তনের ফলে জ্বর ও ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশ কিছুদিন ধরে বেড়েছে বলেও জানান তিনি। তবে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম বলেও জানান হাসপাতালটির শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উপপরিচালক ডা. আবু সাঈদ চৌধুরী।
সবকয়টি রোগই ভাইরাসজনিত কারণে হয়ে থাকে জানিয়ে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তন, ঠাণ্ডা-গরমের মিশ্র আবহাওয়া ও গরমজনিত কারণে শিশুদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে এসব রোগে আক্রান্ত হলেও আতঙ্কের কিছু নেই। যদিও একটু সচেতন ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই সময়ে শ্বাসকষ্ট, ভাইরাল জ্বর, ডায়রিয়া কিংবা নিউমোনিয়া দেখা দিলে দেরি না করে শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন চিকিৎসকরা।