গভীর রাতে ভ্যানে শতাধিক দোকান এনে বালিয়াড়িতে স্থাপন

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ট্যুরিস্ট পুলিশ উচ্ছেদের চেষ্টা করে সফল হয়নি

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ি দখল বেড়েই চলেছে। এবার রাতের আঁধারে দখল করে বসানো হয়েছে শতাধিক দোকানঘর। গত শুক্রবার সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্ট গভীর রাতে এসব দোকান বসানো হয়েছে। দোকানঘর বসিয়ে দখলের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচ ম্যানেজমেন্ট দোকানগুলো উচ্ছেদের চেষ্টা করেও সফল হয়নি। জানা গেছে, বিশেষ কায়দায় তৈরি করা শতাধিক দোকানঘর শুক্রবার গভীর রাতে ভ্যান গাড়িতে করে বহন করে সুগন্ধা পয়েন্টে স্থাপন করা হয়। দোকানঘরগুলো সুগন্ধা পয়েন্ট মসজিদের পেছনে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়। এই চিত্রের ছবি বিভিন্নজন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। জেলা প্রশাসন দোকানঘরগুলো বসানোর অনুমতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকরা। কিন্তু কক্সবাজার সৈকত প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হওয়ায় সৈকতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা বসানোর বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলা প্রশাসনের প্রদত্ত অনুমতির বিষয়টি এতদিন গোপন রাখা হয় বলে জানায় তারা। রাতের আঁধারে দোকান বসানো ব্যক্তিরা নিজেদের ঝিনুক ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়েছেন সাংবাদিকদের কাছে। এ সময় সোহেল নামে একজন দোকান বসানোর যুক্তি দিয়ে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগেও এখানে অনেকে ব্যবসা করেছে। তো আমরা করলে অসুবিধা কী? তবে তিনি বা কেউ বৈধ অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি।

এদিকে রাতের আঁধারে বসানো দোকানঘর সম্পর্কে ট্যুরিস্ট পুলিশ কিছু জানে না বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। তাই শনিবার বিকালে এসব দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালায় তারা। এ সময় এসব দোকান মালিকের সাথে ট্যুরিস্ট পুলিশের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সেখানে আসেন জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজিম খান। এ সময় দোকানদাররা অনুমতির কার্ড দেখালে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট তাদের জানান, কার্ড থাকলে নিয়ম মেনে কার্ডধারীদের দোকানের স্থান বুঝিয়ে দেবে প্রশাসন। তাই দোকানঘরগুলো তুলে নিতে ওইদিন রাত ৯টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তিনি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত একটি দোকানও তুলে নেননি দখলদাররা।

কক্সবাজারের পরিবেশবাদীরা বলছেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে গত সপ্তাহে বদলি করা হয়েছে। নতুন জেলা প্রশাসক এখনো যোগদান করেননি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহেদুল আলম বলেন, সত্যি আমরা অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছি। রাতের আঁধারে দেশের এত বড় একটি সম্পদ দখল করে নেওয়ার বিষয়টি কোনোদিন কল্পনায়ও আসেনি। ‘সরকার পরিবর্তনের পর সৈকতে ব্যবসা পরিচালনার জন্য জেলা প্রশাসন প্রায় ৩০০টি অনুমতিপত্র গোপনে ইস্যু করেছে।’ এই প্রসঙ্গে এডিএম বলেন, সঠিক সংখ্যা এ মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে কিছু অনুমতিপত্র ইস্যু করা হয়েছে।

সৈকত দখলের বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, আমরা সৈকতের আইনশৃক্সখলা রক্ষার দায়িত্বে রয়েছি। রাতের আঁধারে সৈকত দখল করার ব্যাপারটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেওয়ার জন্য যা করার তাই করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে যুক্তরাজ্য কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার স্বীকৃতি