গন্ডামারা থমথমে

দুই মামলায় আসামি সাড়ে তিন হাজার জেলা পুলিশের তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু ।। নিহত রেজার দাফন সম্পন্ন, সুষ্ঠু বিচার দাবি পরিবারের

বাঁশখালী প্রতিনিধি | সোমবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২১ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বাঁশখালীর গন্ডামারায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক। গত শনিবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে ৫ শ্রমিক নিহত হওয়ার পর গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
গন্ডামারা এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও প্রকল্পের পক্ষ থেকে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় জ্ঞাত ২২ জনসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট এবং ১৫ কোটি টাকার মালামালে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঘটনার তদন্তে গঠিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) জাকির হোসেন, দুই সদস্য পুলিশ সুপার নেছার আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবির হোসেন গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা শ্রমিক ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে কর্মরত শ্রমিক ও লোকজনের সাথে কথা বলে ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য অবহিত হওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে গন্ডামারা এলাকার মরহুম মাওলানা আবু ছিদ্দিকের পুত্র মাহমুদ রেজা মীর খানের নামাজে জানাজা গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় হাজী আবদুস সালাম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নিহতের ভাই মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত আহমদ রেজা বলেন, আমরা তিন ভাই, তিন বোনের মধ্যে মীর খান ছিল সবার ছোট। সে পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার শাহ আমানত দাখিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। মাদ্রাসা বন্ধ ও আর্থিক সমস্যার কারণে ১০-১৫ দিন আগে শ্রমিক হিসাবে ১৬ হাজার টাকা বেতনে কাজে যোগ দেয়। রেজার প্রশ্ন, কী কারণে তার নিরাপরাধ ভাইকে হত্যা করা হয়েছে? তিনি ও তার পরিবারের লোকজন এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

গত শনিবার সকালে গন্ডামারায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও রমজানে কাজের সময়সীমা পরিবর্তনের দাবি নিয়ে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন নিহত এবং পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত আহত হন। নিহত ৫ জনের মধ্যে একজনের বাড়ি বাঁশখালী। বাকি ৪ জনের বাড়ি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। গতকাল দুপুরে তাদের লাশ চমেক হাসপাতাল থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আহতরা চমেক হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এস আলম গ্রুপের ল্যান্ড অ্যান্ড প্রোপার্টিজ সমন্বয়কারী আদিল বিল্লাহ বলেন, প্রকল্পে বর্তমানে চাইনিজ প্রায় ৯শ এবং বাংলাদেশি প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক রয়েছে। ঘটনার পর যেসব শ্রমিক চলে গিয়েছিল তাদের বেশ কিছু ফিরে এসেছে এবং কাজে যোগদান করবে। অন্য শ্রমিকরা ফিরে আসবে বলে টেলিফোনে নিশ্চিত করেছে।
শনিবারের ঘটনায় হওয়া দুটি মামলার মধ্যে গন্ডামারা পাওয়ার প্ল্যান্ট ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুজ্জামান বেগ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এই মামলায় পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন স্থাপনা, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, গুলিবর্ষণ করার অপরাধে মামলা করে দুই থেকে আড়াই হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এস আলম গ্রুপের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট এবং ১৫ কোটি টাকার মালামালে অগ্নিসংযোগ করায় ২২ জন জ্ঞাত এবং ১০৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলায় করা হয়। দুই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মো. আজিজুল ইসলামকে।
বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, দুটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্বভার পুলিশ পরিদর্শক তদন্তসহ অপর একজনকে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। দুটি মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলে সাড়ে তিন হাজার আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রলীগ কর্মীর মামলায় চবি ছাত্র কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় রাঙ্গুনিয়ার ৩ প্রবাসীর মৃত্যু