বাঁশখালীর গণ্ডামারা এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ও প্রকল্পের পক্ষ থেকে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় জ্ঞাত ২২ জন সহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, এ ঘটনায় নিহত ৫ জনের মধ্যে গন্ডামারা এলাকার মাহমুদ রেজা মীন খানের নামাজে জানাজা আজ রবিবার (১৮ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ঘটনার তদন্তে গঠিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) জাকির হোসেন সহ অপর দুই সদস্য পুলিশ সুপার নেছার আহমেদ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, শ্রমিক ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে গণ্ডামারা এলাকার মরহুম মাওলানা আবু ছিদ্দিকের পুত্র মাহমুদ রেজা মীন খানের নামাজে জানাজা রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় হাজী আবদুস সালাম জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্টিত হয়।
এ সময় জানাজায় অংশগ্রহণকারী মানুষ তার খুনের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
নিহতের ভাই মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত আহমদ রেজা বলেন, “আমরা তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে মীন খান ছিল সবার ছোট। সে পশ্চিম চাম্বল বাংলা বাজার শাহ আমানত দাখিল মাদ্রাসায় দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল। মাদ্রাসা বন্ধ ও আথিক দৈন্যতার কারণে গত ১০/১৫ দিন আগে শ্রমিক হিসাবে ১৬ হাজার টাকা বেতনে কাজে যোগদান করে সে।”
কী কারণে তার নিরপরাধ ভাইতে হত্যা করেছে তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে সে সহ পরিবারের লোকজন।
প্রসঙ্গত, গতকাল শনিবার সকালে বাঁশখালীর গন্ডামারা এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিক এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন নিহত এবং পুলিশসহ প্রায় অর্ধশত লোক আহত হয়।
নিহত ৫ জনের মধ্যে ১ জনের বাড়ি বাঁশখালী, বাকি ৪ জনের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। তাদের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে রবিবার দুপুরে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আহতরা চমেক হাসপাতাল সহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এস আলম গ্রুপের ল্যান্ড এন্ড প্রপার্টিজ সমন্বয়কারী আদিল বিল্লাহ আদিল বলেন, “প্রকল্পে বর্তমানে চীনা প্রায় ৯শ’ এবং বাংলাদেশী প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক রয়েছে। ঘটনার পর যে সব শ্রমিক চলে গিয়েছিল তারা আবারও বেশ কিছু ফিরে এসেছে এবং কাজে যোগদান করবে। অন্য শ্রমিকরা ফিরে এসে কাজে যোগদান করবে বলে টেলিফোনে নিশ্চিত করেছে।”
জানা যায়, শনিবারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট এবং ১৫ কোটি টাকার মালামালে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে আজ রবিবার ঘটনাস্থল গন্ডামারা ঘুরে দেখা যায় সর্বত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সাধারণ জনগণের মধ্যে আতংক বিরাজ করলেও কোনো আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি।
দু’টি মামলার মধ্যে একটির গন্ডামারা পাওয়ার প্ল্যান্ট ফাঁড়ির দায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই রাশেদুজ্জামান বেগ বাদী হয়ে পাওয়ার প্ল্যান্টের বিভিন্ন স্থাপনা, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও গুলিবর্ষণ করার অপরাধে মামলা করেন। তাতে দুই থেকে আড়াই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা হিসেবে।
অপরদিকে, এস আলম গ্রুপের চীফ কো-অর্ড়িনেটর ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে প্রকল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট এবং ১৫ কোটি টাকার মালামালে অগ্নিসংযোগ করায় ২২ জনকে জ্ঞাত এবং ১ হাজার ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়। দায়েরকৃত এ দুই মামলা বাঁশখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মো. আজিজুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, “প্রকল্পের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়েছে। মামলাগুলো পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত সহ অপর একজনকে তদন্তের দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন।” দু’টি মামলায় জ্ঞাত-অজ্ঞাত মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার আসামি করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।
এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম) জাকির হোসেন আজ রবিবার সরেজমিনে অপর তদন্ত টিমের সদস্য সহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং শ্রমিক ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রকল্পে সংঘটিত ঘটনার ব্যাপারে কর্মরত শ্রমিক ও লোকজনের সাথে কথা বলে ঘটনার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য অবহিত হওয়ার চেষ্টা করছি।”