গণহত্যার বিচার চেয়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি রোহিঙ্গাদের

কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে সমাবেশ

উখিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৬ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের গণহত্যার বিচার ও প্রত্যাবাসনের দাবিতে কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এ সময় তারা চোখের জলে গণহত্যায় হারানো স্বজনদের স্মরণ করেন। উখিয়ার ২০টি আশ্রয় ক্যাম্পে শত শত নারী, শিশু, বৃদ্ধ, পুরুষ এ সব সমাবেশ যোগ দেন।
মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকারের অধীনে দেশটির সামরিক বাহিনীর ‘এলাকা পরিষ্কার’ শিরোনামে পরিচালিত মানবতা বিরোধী অভিযানের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সর্বশেষ প্রায় সাড়ে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নৃশংস সন্ত্রাসী অভিযান গণহত্যায় রূপ নেয়। সে সময় অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়, অনেক রোহিঙ্গা নারীকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে অনেক রোহিঙ্গা আটক ও নিখোঁজ রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের দিনটিকে রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে উখিয়ার কুতুপালং মেগা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইনকে ঘিরে প্রায় সব ক্যাম্পে পূর্ব নির্ধারিত স্থানে জড়ো হতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা।
সমাবেশগুলোতে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও বক্তৃতার মাধ্যমে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার শোয়াইব, মাস্টার নুরুল আমিন, সিরাজুল মোস্তফা, মাস্টার জুবায়ের, মোহাম্মদ ইউসুফ, মাস্টার কামাল প্রমুখ। আয়োজিত সমাবেশগুলোতে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এই দিনে মিয়ানমার জান্তা ‘গণহত্যা’ চালিয়েছে। আমরা আর উদ্বাস্তু হয়ে থাকতে চাই না। বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের অনেক কিছু হারিয়েছি। এখন আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই। মিয়ানমার সামরিক জান্তা আমাদের নিধন করতে জন্মভূমি থেকে ৫ বার বিতাড়িত করেছে। প্রতিবারই মানবিক বাংলাদেশ আামদের আশ্রয় দিয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। সভাগুলোতে রোহিঙ্গারা আগের মত মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসন সহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, প্রত্যাবাসনকালে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় রাখা যাবে না, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোনের ঘোষণা দিতে হবে, রোহিঙ্গাদের সহায়-সম্বল ফেরত দিতে হবে, প্রত্যাবাসনের সুনির্দিষ্ট সময় বেধে দিতে হবে, গ্রামভিত্তিক সংশ্লিষ্ট গ্রামের সকলকে একসঙ্গে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন করা যাবে না। এ ছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ‘ক্যাম্পে শান্তিপূর্ণভাবে ‘রোহিঙ্গাদের জেনোসাইড রিমেম্বার ডে’ কর্মসূচি শেষ হয়েছে। ক্যাম্পে যাতে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি না হয় সে জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সেক্রেটারি এ্যান্থনি জে, লিঙ্কন গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি রোহিঙ্গা সহ মিয়ানমারের সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক জান্তার জেনোসাইডের বিষয়ে সমর্থন ও আইনি প্রক্রিয়া অংশীদারত্বের ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার জাতীয় ঐক্য সরকার। গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ঐক্য সরকার রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকার নিশ্চিত করে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ সহ সব মহলের প্রচেষ্টার সাথে একমত পোষণ করেছে। মিয়ানমার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আইসিসি ও আইসিজে এ চলমান মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতির কথা জানায়। টেকনাফ প্রতিনিধি জানান, টেকনাফেও ক্যাম্পের নির্দিষ্ট স্থানে রোহিঙ্গারা সমাবেশ করেছে। এতে তারা নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার এবং গণহত্যার বিচার দাবি করেন।
শান্তিপূর্ণ ভাবে এ অনুষ্ঠান সফল করতে এপিবিএন এর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উখিয়া ৮ এপিবিএন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মো: কামরান হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমহাবিশ্বের মহাবিস্ময় আল-কোরআন
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা