চট্টগ্রাম–৮ বোয়ালখালী–চান্দগাঁও–পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ (আংশিক) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে খুব কাছ থেকে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তালিকাভুক্ত ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৩)। এসময় গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাহ ও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরানুল হক শান্ত। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চাইল্যাতলী খোন্দকারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এরশাদ উল্লাহ ও শান্তকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে শান্তর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে আইসিউতে নেয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে এরশাদ উল্লাহকে আশঙ্কামুক্ত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ জানিয়েছেন, এরশাদ উল্লাহ দুর্বৃত্তের টার্গেট ছিলেন না। মূল টার্গেট ছিল নিহত সরোয়ার বাবলা। বাবলার প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে। ঘটনার মূল কুশীলব বর্তমানে জেলে আছে।
এদিকে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ আহত হওয়ার খবর পেয়ে তাকে দেখার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ছুটে যান বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলের নেতা। তারা গণসংযোগে গুলির ঘটনায় নিন্দা জানান এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এছাড়া নগরের কাজীর দেউড়িতে ঘটনার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে নগর বিএনপি।
কী ঘটেছে : প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়েন এরশাদ উল্লাহ। একই মসজিদে নামাজ পড়েন বাবলাও। নামাজ শেষে বের হয়ে গণসংযোগ করছিলেন এরশাদ উল্লাহ। সেখানেও উপস্থিত ছিলেন বাবলা। এ সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা গেছে, ভিড়ের মধ্য থেকে হঠাৎ একটি হাত বের হয়ে বাবলাকে টার্গেট করে পেছন থেকে গুলি করা হচ্ছে। তখন বাবলার সামনে একটি দোকানে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন এরশাদ। গুলির শব্দ শুনে উপস্থিত লোকজন আতংকে সরে যান। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাস্তায় সাদা রঙের ট্র্যাকস্যুট পরা এক যুবক মাটিতে লুটিয়ে আছেন। তার শরীর থেকে রক্তের স্রোত গড়িয়ে পড়েছে। ওই যুবকই সরোয়ার বাবলা।

এরশাদ উল্লাহর পিএস আরিফ মুন্না আজাদীকে জানান, ওখানে গণসংযোগের কর্মসূচি ছিল না। নামাজের সময় হওয়াতে মসজিদে যান এরশাদ উল্লাহ। নামাজ শেষে বের হয়ে উপস্থিত লোকজনের সাথে কথা বলছিলেন। এসময় আকস্মিক গুলির ঘটনা ঘটে। গত রাতে মুন্না জানান, এরশাদ উল্লাহ আশক্সক্ষামুক্ত। তিনি স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলছেন। সুস্থ আছেন। নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ আজাদীকে বলেন, এরশাদ উল্লাহ সুস্থ আছেন। তার পেটের ডানপাশে ছররা গুলি লেগেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে নিহত বাবলার বাবা আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মসজিদে এরশাদ উল্লাহ নামাজ পড়েন। আমার ছেলে ওনার পেছনের কাতারে ছিল। আমি ছিলাম এর উত্তর পাশে। তিনজন নামাজ পড়ে বের হলাম। এরশাদ সাহেবকে সাথে নিয়ে দোকানদারদের আমার ছেলে বলছে, এরশাদ সাহেব আপানাদের সালাম দিচ্ছে। উনি ৮ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। আপনারা সবাই দেয়া করবেন। ৭–৮টা দোকানে এভাবে বলে বলে গেছে। শেষ দোকানে যাওয়ার পর একটা ফায়ার হয়েছে। তখন আমার ছেলে এরশাদ সাহেবকে সেভ করেছে। আমার ছেলের বুকে গুলি লাগে। সরোয়ার বাবলার বাবা বলেন, তিনদিন আগে বড় সাজ্জাদ আমার ছেলেকে বলেছে, তোমার সময় শেষ। যা খাওয়ার আছে খেয়ে নাও। রায়হানকে দিয়ে আমার ছেলেকে মারিয়েছে।

এভার কেয়ার হাসপাতাল গেটে উপস্থিত সাংবাদিকদের সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, এরশাদ উল্লাহ মূল টার্গেট ছিলেন না। টার্গেট যে ছিল সে সরোয়ার বাবলা মারা গেছে। কারণ আমরা যেটা শুনলাম, গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। যেখানে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা সরোয়ার বাবলার এলাকা ছিল। মসজিদে নামাজ পড়েছে সে। এরশাদ উল্লাহও মসজিদে নামাজ পড়েছেন। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, এটার হত্যা মামলা হবে। এরপর আমরা আরো তদন্ত করব। তবে কাজটা কারা করতে পারে এ বিষয়ে আমাদের প্রাথমিক কিছু অনুমান আছে।
সিএমপি কমিশনার বলেন, সারোয়ার বাবলার ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল। যারা করেছে এদেরও। এরা প্রতিপক্ষ ছিল। এই ঘটনার মূল কুশীলব কিন্তু বর্তমানে জেলে ছিল। দেশের বাইরে থেকেও নানা রকম ইন্ধন আসছে। বাকলিয়ার ডাবল মার্ডারের কিলিং মিশনে অংশ নেয়া লোকও কিন্তু অ্যারেস্ট হয়েছে অস্ত্রসহ। হাসান নামে একজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যেটা দেখছি, অনেক রিমোট এলাকায় এরা পালিয়ে থাকে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সাথেও এদের যোগাযোগ আছে। গভীর দুর্গম এরিয়া থেকে এসে হঠাৎ ঘটনা ঘটিয়ে হোন্ডা নিয়ে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, এদের বাহিনীর অনেক লোক গ্রেপ্তার হয়েছে। একজন তো সস্ত্রীক গ্রেপ্তার আছে, বর্তমানে জেলে আছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনো তিন–চার মাস সময় আছে। এ সময়ে এমন একটি ঘটনা, একদম শুরুতে এরকম একটা ঘটনা। আমাদের শুরুটা ভালো হলো না। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়া দরকার আমরা নেব। তিনি বলেন, এ ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় যেটা আমরা করবো, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যত দল আছে তাদের প্রত্যেকের জনসংযোগ লোকাল থানা বা সিটিএসবিতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে ইনফরম করতে হবে। করলে আমরা প্রার্থী এবং তাদের যে জনসভা সেগুলোর নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করব।












