গণমিছিলে সংঘর্ষ পুলিশসহ নিহত ২

খুলনা হবিগঞ্জ উত্তরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, আহত দেড় শতাধিক

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী, পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার খুলনা ও হবিগঞ্জে পৃথক সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য এবং এক যুবক নিহত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক।

খুলনা : খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ সদস্য। গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গল্লামারী এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে তিনি মারা যান বলে জানান খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক। নিহত কনস্টেবলের নাম সুমন ঘরামি। তিনি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বাসিন্দা। কমিশনার বলেন, সংঘর্ষ চলাকালে আন্দোলনকারীরা কনস্টেবলকে বেধড়ক মারপিট করে। আহত অবস্থায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, সংঘর্ষে পুলিশের প্রায় ৩০ সদস্য আহত হয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘ছাত্রজনতার গণমিছিল’ কর্মসূচির সমর্থনে বেলা সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গল্লামারী এলাকায় পৌঁছালে জিরো পয়েন্টের দিক থেকে পুলিশ টিয়ার শেল ছোড়ে। পরে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ৩টার দিকে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেন তারা। এ সময় কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে রওনা হন। এ সময় তারা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে এক যুবক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুপুরে হাসপাতালে নিয়ে আসার পর ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার বুকেপিঠে গুলি লেগেছে। নিহত মোস্তাক আহমেদের বয়স ২৬ বছর। তিনি পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিজিবি) ঠিকাদারের অধীনে লাইনম্যানের কাজ করতেন এবং তার বাড়ি সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এর আগে হবিগঞ্জ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হবিগঞ্জ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহিরের বাসার গেট ভাঙচুর ও ১০টি মোটরসাইকেল অগ্নিসংযোগ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও দেওয়া হয় আগুন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত ‘প্রার্থনা ও ছাত্রজনতার গণমিছিল’ কর্মষূচিতে অংশ নিতে জুমার নামাজের পর হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট মসজিদের সামনে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় পূর্ব টাউন হল এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলে যোগ দিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় টাউন হল এলাকায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সিলেট : সিলেটে ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দফায়দফায় চলা সংঘর্ষ থেমেছে। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, একটু আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। আমাদের ৯ পুলিশ আহত হয়েছেন; আর ১২ জনকে আটক করে থানায় পাঠানো হয়েছে। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট নগরীর মাদিনা মাকের্ট ও আখালিয়া এলাকায় পুলিশ ও ছাত্রজনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে। তবে ছাত্রদের আন্দোলনে মাদিনামাকের্ট ও আখালিয়া এলাকার পাড়ামহল্লার জনতাকে অংশ নিতেও দেখা গেছে। মদিনামাকের্টবাগবাড়ি সড়ক এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৮টার পরও সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শোনা গেছে। সিলেট নগরীতে থেমেথেমে পুলিশ ও ছাত্রজনতার মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া সাংবাদিক ও পথচারীও আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় এক শিশু গুলিবিদ্ধ হলে তাকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।

বিকালে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করলে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। কিন্তু তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে।

উত্তরা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিল কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। গণমিছিল কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরের পর উত্তরার মাইলস্টোন কলেজ ক্যম্পাসের কাছে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা অবস্থান নেয় জমজম টাওয়ারের পাশে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া থেকে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তিরও খবর পাওয়া গেছে।

নরসিংদী : নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থী আহতের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থীর। তবে তাৎক্ষণিক আহতদের নামপরিচয় জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘প্রার্থনা ও ছাত্রজনতার গণমিছিল’ নিয়ে গতকাল বেলা ৩টার দিকে সদর উপজেলা মোড়ে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মিছিল সেখানে গেলে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক লাঠিপেটা ও মারধর করা হয়। এতে কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হন। তবে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা পুলিশকে কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

নরসিংদী সদর থানার ওসি তানভীর আহমেদ বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তবে এটা তেমন কিছু না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনালার পাশে এনজিওকর্মীর বস্তাবন্দী লাশ
পরবর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের কাছে পলকের করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা