গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই : তথ্য উপদেষ্টা

‘দলীয় কর্মীদেরও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল’

| বুধবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই। এই স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমকে সাহসের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তিনি গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন। পরে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সামনে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত সময়ে (আওয়ামী লীগ আমলে) অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের কোনো নীতিমালাই ছিল না, দলীয় কর্মীদেরও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে।

সম্পাদকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তথ্যের অবাধ প্রবাহের ওপর গুরুত্বারোপ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সঠিক তথ্য ব্যাপকভাবে প্রচার না হওয়ায় গুজব ও অপতথ্যের দ্বারা মানুষ প্রতিনিয়ত বিভ্রান্ত হচ্ছে। গুজব ও অপতথ্য প্রতিরোধে গণমাধ্যমকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। খবর বাসস ও বাংলানিউজের।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে যারা শহিদ ও আহত হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের গল্প গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের জনস্মৃতিতে রাখতে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় অনেক গণমাধ্যমকর্মী ভয়ে সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে পারেননি। এখন সেই সময় কেটে গেছে। উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারের গুম ও দুর্নীতিসহ সকল অপকর্মের তথ্য গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।

গণমাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরকার গণমাধ্যমের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করে। গণমাধ্যমের সংস্কার প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার গণমাধ্যমের সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কমিশন গঠন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গণমাধ্যমের সংস্কার করা হবে।

মতবিনিময় সভায় ইংরেজি পত্রিকার জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি জানানো হয়। মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দলীয় কর্মীদেরও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছিল: মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক শেষে উপদেষ্টা নাহিদ সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক, অনেকদিন থেকে সাংবাদিকতা করছেন, কিন্তু বিগত রেজিমে তারা কখনও সচিবালয়ে ঢুকতে পারেননি। তাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কখনোই দেওয়া হয়নি। বিগত রেজিমে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের কোনো নীতিমালাই ছিল না। দলীয় কর্মীদেরও কার্ড দেওয়া হয়েছে, যারা সাংবাদিক না তাদেরও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গা থেকে এই জঞ্জালগুলো আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, অপরাধ না করেও যদি নাম এসে থাকে, সেটা আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুত সময়ে যেহেতু আমাদের কাজ করতে হয়েছে, তাই হয়তো সেখানে ভুলত্রুটি থাকতে পারে। কিন্তু যারা মূলত সাংবাদিক না, সাংবাদিকদের নীতিমালার মধ্যে পড়ে না, যারা ব্যক্তিগত নানা সুবিধার মধ্যে দিয়ে গত সরকারের আমলে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পেয়েছিলেন, তাদের কার্ডগুলোই বাতিল করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে আইনগত বা আর্থিক অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। নবায়নের সুযোগ থাকবে। ধীরে ধীরে আমরা নবায়ন করব। কারও যদি নাম এসে থাকে, সে যদি তথ্য প্রমাণ দেন, তাকে আবার বিবেচনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমালোচনার জবাবে যা বললেন ফারুকী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের শুঁটকিপল্লীতে ব্যস্ততা