গণভোট আর জাতীয় নির্বাচন একই দিনে আয়োজন করা হলে ‘হজ–পজ’ (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, হ্যাঁ–না ভোট কেন নির্বাচনের দিন দিতে হবে? আটদলীয় জোট দাবি করেছে, পৃথক একটি দিনে হ্যাঁ–না ভোটের আয়োজন করতে হবে।
তিনি গতকাল নগরের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান আদেশ) ২০২৫ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন করা’সহ পাঁচ দফা দাবিতে ৮ দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মামুনুল হক। শাহাজাহান চৌধুরী বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে অসুবিধা কোথায়? নিশ্চয়ই নির্বাচনের ব্যাপারে আপনাদের দুরভিসন্ধি রয়েছে। তাই আজকের এই লালদীঘির সমাবেশ থেকে বলতে চাই। সারা দেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, আগামী দিনে ন্যায়, ইনসাফ, বৈষম্যহীন একটি ইসলামী স্টেটের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হযেছে। যা দেখে কিছু সংখ্যক রাজনীতিবিদ ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ অতীতে যেমন বস্তা বস্তা টাকা ও অস্ত্র দিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, তারাও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, কোনো গণতন্ত্র বিরোধী কোনো শক্তি আগামী নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। লেবেল প্লেয়িংয়ের মাধ্যমে আগামীদিনে নির্বাচন হবে। কিন্তু জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলার মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ। দলীয় প্রতীকে ভোট দেওয়ার পাশাপাশি হ্যাঁ ভোটের বাঙ ভরতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সরকারকে তার দায় নিতে হবে। তিনি বলেন, এবার ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলার মাটিতে জেগে উঠেছে। সকল চক্রান্ত, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনতার বিজয় হবে।
মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের রক্তে গড়া। বনেদিদের বাংলাদেশ আর থাকবে না। অনেক দল থেকে আসন সমঝোতার অফার দেয়া হয়েছিল। আমরা বাংলাদেশের অধিকার মালিকানা কায়েম করতে চাই। ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কবর রচনা করে আল্লাহর আইনের ব্যবস্থা রচনা করা হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এটি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, আসুন আমরা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে চট্টগ্রামকে ইসলামের ঘাঁটি বানাই। চট্টগ্রামের মাটি ইসলামের ঘাঁটি। ৮ দলের এই শক্তি ক্ষমতায় গেলে আপনারই দেশ শাসন করবেন। কারও দাদার শক্তিতে এ দেশ আর চলবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন পর্যায়ে দাঁড়াবে বিদেশিরা এখানে পড়ালেখা করতে আসবে। আসুন আমরা সবাই মিলে সেই দেশ গড়ি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ব্রিটিশ এই দেশ থেকে চলে গেলেও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও বৈষম্য দূর হয়নি। সেই থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যারা শাসক ছিল তারা বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারেনি। তাই ৫ আগস্টের আন্দোলনে হাজার হাজার জীবনের বিনিময়েও মানুষ মুক্তি পায়নি। আগামীতে আবারও চাঁদাবাজ, জামেলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে বৈষম্য থাকবে না। কেউ দশ তলায় কেউ নিচতলায় থাকবে সেটা আর হবে না।
তিনি বলেন, আমরা ইসলামের পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে চাই। ইসলামকে বিজয় করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলে ইসলাম আগামীতে ক্ষমতায় যাবে ইনশাআল্লাহ। যথাসময়ে নির্বাচন দিতে হবে। কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মানবে না। হুমকি ধমকি চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সরকারে গঠন করতে হবে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন বলেন, বাংলাদেশের কয়েকবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন–মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। আমরা সাধারণ মানুষ জানতে পারি না, তিনি কেমন আছেন, কোথায় আছেন। আমাদের মনে হচ্ছে, তার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি হচ্ছে। বেগম জিয়া বিএনপির একক সম্পদ নয়। তার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে ও কোথায় তাকে নেয়া হবে জাতির কাছে তা স্পষ্ট করতে হবে। এসময় তারেক জিয়াকে ইঙ্গিত করে বলেন, মায়ের চিকিৎসা যদি করতে না পারেন, মায়ের সেবা যদি করতে না পারেন, আপনার দ্বারা দেশের সেবা হবে না।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নায়েবে আমীর আলহাজ্ব মাওলানা আব্দুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মুন্সি, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব আল্লামা মুফতি মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আলী উসমান, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, খেলাফত মজসিলের যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ ভূঁইয়া, ইসলামী আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি রেজাউল করিম আববার, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরী আমির মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগরী সহ–সভাপতি এডভোকেট আব্দুল মোতালেব, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মুজাফফর মোহাম্মদ আনাছ, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সোহাইল, খেলাফত মজলিস চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি অধ্যাপক খুরশিদ আলম ও নেজামে ইসলাম পার্টি চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মাওলানা জিয়াউল হোসাইন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমীর মুহাম্মদ আলাউদ্দীন সিকদার, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আমীর আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামী কঙবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহম্মদ আনোয়ারী, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, মোহাম্মদ উল্লাহ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, মহানগরীর সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট জোবায়ের মাহমুদ।












