গণভোট অপ্রয়োজনীয়, বলছে সনদে সই না করা বাম দলগুলো

| শুক্রবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২৫ at ৪:১১ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন, তা অপ্রয়োজনীয়, সংবিধানের বাইরের বিষয় বলে মনে করছে বাম ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমন মত প্রকাশ করেছে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর না করা দলগুলো। খবর বিডিনিউজের।

রাষ্ট্রপতি কীভাবে এই আদেশ জারি করলেন, সেই প্রশ্ন তুলে বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, এই যে রাষ্ট্রপতি যে স্বাক্ষর করল, আদেশটা জারি করল, এটা কোন ক্ষমতা বলে? এই অধিকার তো তার নাই। সেটা তো সে করতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তো এই ধরনের কোনো আদেশ জারি করতে পারে না। অধ্যাদেশ জারি করতে পারে। এটাও তো বিদ্যমান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হল। একইভাবে গণভোট আয়োজন সম্পূর্ণরূপে সংবিধান বহির্ভূত এবং অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং ঐকমত্য কমিশনের প্রধান একই ব্যক্তি। সেটা একটা কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট। এই গণভোট, পিআর, উচ্চকক্ষ এগুলোতে আমরা ওখানে (ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়) বিরোধিতা করেছি। বাংলাদেশে উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয়। গরিবের দেশে এটা দরকার নাই। গরিবের ঘোড়া রোগের মত ব্যাপার হয়।

ফিরোজ বলেন, এই যে গণভোট, গণভোটটা আমরা বলছি অপ্রয়োজনীয়। এই গণভোটের কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। আইনগত কোনো ভিত্তি থাকবে না। এটা হল জনগণের সম্মতি, একটা নেওয়া হল। কিন্তু এটা হল যে, এই গণভোটটাও জনগণের সম্মতি। আবার জাতীয় সংসদে যারা পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচন হবে, তারাও কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট পেল। এক জনগণের সম্মতি নিয়ে আরেকটা জনগণের সম্মতির উপরে তারা চাপিয়ে দিতে পারে না। বাস্তবে এটার কোনো মূল্য নাই। আইনগত কোনো ভিত্তি নাই। আগামী সংসদ যদি এগুলো না মানে, তাহলে কিছু করণীয় নাই। আমরা গণভোটটা অপ্রয়োজনীয় মনে করছিলাম আগেও, এখন আমরা মনে করি অপ্রয়োজনীয়। তিনি বলেন, গণভোট, উচ্চকক্ষ এই সমস্ত বিধান, সাংবিধানিক আদেশ এগুলোর দিকে জনগণের এখন মনোযোগ নাই। জনগণের মনোযোগ এখন নির্বাচন কমিশনে। সবাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে? সুষ্ঠু হবে কিনা? নিরপেক্ষ হবে কিনা? সেটার দিকে তাকিয়ে আছে। সেই দিকে মনোযোগ দেওয়াটা জরুরি।

বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, এখানে নোট অফ ডিসেন্ট তো পুরোটাই অগ্রাহ্য করা হল। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে আলাপ আলোচনা হল, পুরোটাই তো অগ্রাহ্য করা হল। গণভোটে যে চারটে প্রশ্ন নির্ধারণ করা হল, যে প্রক্রিয়ায়, এটাতেও একটা ভোট, মানে এই চারটা প্রশ্নের উপর কিন্তু ভোট দিতে পারবেন। দেখা গেল চারটার মধ্যে তিনটা প্রশ্নে কেউ একমত। একটা প্রশ্নে তার ভিন্ন মত আছে। তো এই ভিন্নমতটা সে কীভাবে রাখবে? তখন সে হাঁ দিতে চাইলেও একটা প্রশ্নের জন্য দিল না। তো মানে এখানে ভিন্ন মত রাখার তো সুযোগ থাকল না।

তিনি বলেন, জনগণ যদি তার মতামত দিতে চায়, আমি যদি ধরি জনগণই সর্বোচ্চ মত প্রকাশ করতে পারে এবং সেটাই নির্ধারিত হবে। কিন্তু যদি একটা ব্যাপারে দ্বিমত থাকে, তখন দেখা যাবে যে সে চাইলেও সেখানে হাত দিতে পারবে না। তাকে ‘না’ দিতে হবে। আর ভিন্নমত রাখলে সংস্কার কার্যক্রম সেটাই পুরোটা ব্যাহত হবে। এটা একটা অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হয় না।

জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে এক সঙ্গে আয়োজনের ঘোষণাসহ প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে এখনই কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নূরুল আম্বিয়া। তিনি বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরও ৫ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ কর্মী গ্রেপ্তার