দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ নেতাদের একাংশের বর্ধিত সভা ডেকে কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন। গণফোরামের ব্যানারে গতকাল মন্টু, আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরীদের সভার বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
কামাল বলেন, ওদের কোনো সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং বৈধতা নেই এই ধরনের মিটিং করার। এই মিটিংয়ের সাথে আমাদের দল গণফোরামের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত না। যেহেতু এটি আমাদের দলের বিষয় না, সেজন্য এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এদিকে, অশীতিপর কামাল হোসেনের ‘স্মৃতি বিভ্রাট’ ঘটছে বলে মনে করছেন গণফোরামের নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। ভাঙনের উপক্রম দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মন্টু গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের ডাকা বর্ধিত সভার পর সংবাদ সম্মেলনে তার এই ধারণার কথা জানান। খবর বিডিনিউজের।
গত বছর কাউন্সিলে মন্টুকে বাদ দিয়ে রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করার পর থেকে গণফোরামে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নেয়। রেজা কিবরিয়ার বিপক্ষে দাঁড়ান মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদসহ বেশ কয়েকজন। এক পর্যায়ে রেজা কিবরিয়া চারজনকে বহিষ্কার করেন। সুব্রত চৌধুরীরাও পাল্টা বহিষ্কার করেন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াসহ চারজনকে। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যে ৪ মার্চ গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়ে দুই সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। তিনি নিজে আহ্বায়ক হয়ে সাধারণ সম্পাদক করেন রেজা কিবরিয়াকে। তাতে না দমে গতকাল বর্ধিত সভা ডেকে কাউন্সিল আহ্বান করেন মন্টুরা। সভায় তারা রেজা কিবরিয়ার বহিষ্কারাদেশে অনুমোদনও করিয়ে নেন। তবে কামালের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে মন্টুরা বলেছেন, তাকে ‘ভুল বুঝিয়ে’ নানা সিদ্ধান্ত নেওয়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, এসব কথা তারা বলার জন্য বলছে। এটা তাদের একটা কায়দা–কৌশল। এদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। তারাই দলে বিশৃক্সখলা সৃষ্টি করছে।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেন, এই যে মিটিংটা হলো এটা গণফোরামের মিটিং না। সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কেউ সভা ডাকতে পারেন না। তারা এরকম সভা করে গর্হিত কাজ করেছেন। এই সভার সাথে গণফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আবু সাইয়িদ তাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্টভাবে আছে, জাতীয় কাউন্সিলন একবার হয়ে যাওয়ার পরে অন্তর্বর্তী সময়ে আরেক কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটি দলের সর্বোচ্চ সংস্থা। সেই কেন্দ্রীয় কমিটি মিটিংই হয়নি এতদিন। এই কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কোনো ব্যক্তির না, আমরা যারা পদবী হোল্ড করি আমাদের না, এই কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত সভা, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তবে আবু সাইয়িদরা গণফোরাম থেকে বিযুক্ত হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন রেজা কিবরিয়া। ২৬ তারিখে মিটিংটা করে তারা নিজেদেরকে গণফোরামের থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তারা গণফোরাম থেকে চলে গিয়ে সভা করতে পারেন, কিন্তু গণফোরামকে ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
কামাল হোসেনের স্মৃতি বিভ্রাট হচ্ছে : মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, আমরা উনাকে (কামাল হোসেন) বারে বারে বলেছি, সাক্ষাৎ করে বলেছি কেন্দ্রীয় কমিটি মিটিং ডেকে সম্মেলনের তারিখটা নির্ধারণ করেন। আমরা চিঠি দিয়েও বলেছি। আমরা কয়েকদিন আগে যে গিয়েছিলাম, উনি বলেছেন, ‘বসেন’। তারপরে বলেন যে, ‘না এরকম কোনো কথা আমি বলিনি’। আমরা যেটা মনে হয়, হয়ত উনি কিছু জিনিস ভুলে যান। আমার মনে হয়, একটু স্মৃতি বিভ্রাট ঘটছে আর কী। তাছাড়া ওদের একটা অশুভ প্রভাব আছে, যে প্রভাবে উনি অনেক কিছু গুলিয়ে ফেলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন সংগঠন এক থাকবে।
বর্ধিত সভার সিদ্ধান্তের সঙ্গে সভাপতি কামাল হোসেন একমত হবেন কিনা–সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বারে বারে বলেছি, দলীয় স্বার্থে আমাদের পুরনো যত নেতাকর্মী আছে, সবাইকে নিয়ে বসে সমস্ত সমস্যার সমাধান করে আপনি একসাথে এগিয়ে যান। বারে বারে উনি উদ্যোগ নেন, বলেন, হ্যাঁ, বসব। তারিখও দেন। এরপরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখি কিছু ব্যক্তির অদৃশ্য হস্তক্ষেপে উনি হয়ত ভুলে যান, না হয় বলতে পারেন না। ১৮ মাস ধরে এই অবস্থা। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং হয়েছে আমি যখন সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সম্পূর্ণভাবে অগঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ সমস্ত চলে আসছে এবং যারা দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া, কাজ করেছে। নবাগতরা এসে তাদেরকে বহিষ্কার করে দিচ্ছে।
আপনাদের সঙ্গে কি কামাল হোসেন আছেন–এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মন্টু বলেন, আমরা অবশ্যই মনে করি যে, উনি আছেন। উনাকে এই সভা থেকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনি যেসব লোক বিতর্কিত তাদের পরিহার করুন এবং মাটির সাথে যাদের সম্পর্ক আছে, রাজনীতি করছে তাদের সাথে নিয়ে আপনি এগিয়ে যান, সংগঠনের গতি বাড়বে এবং মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারব। কামাল হোসেনের সাড়া না পেলে কাউন্সিলেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মন্টু। আগামী ২৬ ডিসেম্বর সম্মেলন ডেকে তার প্রস্তুতি পরিষদও গঠন করেছেন তারা।
তবে কামাল হোসেন বলেছেন, মন্টুদের ডাকা এই সভার সঙ্গে গণফোরামের সম্পর্ক নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে : বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে রয়েছে গণফোরাম। তবে গণফোরামের এই অংশ ওই জোটে না থাকার বিষয়ে দ্বিধান্বিত। জোটের বিষয়ে মন্টু বলেন, সেসময়ে আমাদের দলের অনেক নেতৃবৃন্দ তাদের একটা প্রচণ্ড রিজারভেশন ছিল এভাবে ঐক্য না হওয়া। আমাদের সভাপতিসহ এমন একটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তারা এত ঘন ঘন আসা শুরু করলেন যে পরিবেশটা ওই ধরনের ছিল না তখন। আমি সভাপতিকে নিজেও বলেছিলাম আমি নির্বাচন করব না। তারপরেও যেহেতু আমি পার্টির সেক্রেটারি উনার নির্দেশ আমাকে পালন করতে হয়েছে। আমরা কিন্তু জামায়াতের সাথে ঐক্য করব না বলে দিয়েছিলাম, ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত ছিল না। নির্বাচনে কী পরিস্থিতি হয়েছে সেটা আপনারা জানেন, যে নির্বাচন পরের দিন হওয়ার কথা সেটা রাত্রে হয়ে গেছে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গ আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই ঐক্য এখনও ভাঙা হয়নি। আমরা জাতীয় সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেব, সেই ঐক্যের ব্যাপারে কী করব।