কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণীতে মসজিদ ভবন নির্মাণের নামে ব্যানার টাঙিয়ে এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা তুলে গণপূর্তের জমিতে মার্কেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নেতারা। এরপর ব্যানার হাওয়া করে দিয়ে সেই মসজিদ ভবনে ভাড়া দেয়া হলো ডজন খানেক দোকানপাট।
কক্সবাজারে প্রশাসনের নাকের ডগায় (পুলিশ সুপার কার্যালয় লাগোয়া) এ অভিনব প্রতারণাটি করেছে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। অভিযোগ ওঠেছে, সরকারেরই আরেকটি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন ৭ শতক জমি অবৈধভাবে দখলে রাখার জন্য অভিনব প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এমন কি প্রস্তাবিত এই মসজিদ নির্মাণের জন্য স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা মোটা অংকের টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে জমির মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, জমি অবৈধ দখলে রাখার ঘটনায় গত বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার সদর থানায় জিডি করা হয়। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কক্সবাজার জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তার নেতৃত্বে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপর নির্মাণাধীন সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করে সরকারি জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ আকারে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন মহলের কোনো ধরনের নির্দেশনা আসেনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, কক্সবাজার শহরের শহীদ সরণি সড়কে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে রাস্তার পাশে গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন ৭ শতক জমি রয়েছে। ওই জমি গত ২০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতি। গত বছর নভেম্বর মাসে সেখানে পাকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে বিষয়টি গণপূর্ত বিভাগের নজরে আসে। এরপর গণপূর্তের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হলে সেখানে মসজিদের ব্যানার টাঙিয়ে পাকা ভবন নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়। গণপূর্ত বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে সেখানে এক তলা পর্যন্ত ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে মোটা অংকের সালামি নিয়ে দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ জানানোর অন্তত ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা প্রশাসন ও কউক এখনও পর্যন্ত সরকারি জমি উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
স্থানীয়রা জানান, ভবনটির নির্মাণকাজ শুরুর আগে ওই সমিতির উদ্যোগে বিরোধীয় জায়গায় মসজিদের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যানার টানানো হয়। এমন কি সমিতির দায়িত্বরতরা মসজিদ নির্মাণের নামে স্থানীয় বিশিষ্টজনের কাছ থেকে অনুদানের নগদ টাকাও সংগ্রহ করে। কিন্তু সরকারি ওই জায়গায় মসজিদের বদলে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বাণিজ্যিক ভবন।
স্থানীয় সমাজকর্মী সরওয়ার আলম বলেন, জেলা চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির দায়িত্বরতরা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের পাশের জায়গায় একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য আমার কাছে চাঁদা চাইলে আমি তাদেরকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকার অনুদান দিই। পরে দেখি সেখানে মসজিদের পরিবর্তে একটি মার্কেট গড়ে তোলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বলেন, এ বিষয়টিতে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। প্রস্তাবিত মসজিদ ও মার্কেট নির্মাণের জন্য সমিতির উদ্যোগে সভাপতিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়ে। এ বিষয়ে তারাই ভাল বলতে পারবেন।
তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কক্সবাজার জেলা কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী সমিতির সভাপতি সোলতান মাহমুদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, যেহেতু কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের, সেহেতু বিষয়টি আমাদের উপর বর্তায়। এজন্য আমি নিজে গিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বলেছি। তাদের (কালেক্টরেট চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী) আমি পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি যে, জমিটি গণপূর্ত বিভাগের এবং তাদের অনুমতি ছাড়া সেই জমি বন্দোবস্তিও দেয়া যাবে না। বন্দোবস্তি পেতে হলে গণপূর্তের লিখিত অনুমতি লাগবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, গণপূর্ত বিভাগের জমি দখল করে অবৈধভাবে কেউ ভবন নির্মাণ করলে সেই দায়িত্বটি একান্তভাবেই গণপূর্ত বিভাগের উপর বর্তায়, জেলা প্রশাসনের উপরে নয়।