গণপিটুনির ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে

| শুক্রবার , ৭ মার্চ, ২০২৫ at ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হয়েছেন। আর গত ১০ বছরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন কমপক্ষে ৭৯২ জন। আহত হয়েছেন ৭৬৫ জন। এইচআরএসএস বলছে, সমপ্রতি গণপিটুনির মাধ্যমে মানুষ হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ডাকাত, চোর, ছিনতাইকারী সন্দেহেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসবের বাইরে ধর্মীয় অবমাননা এবং ছেলেধরার অভিযোগেও গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। গণপিটুনির ঘটনায় থানায় মামলা হলেও সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের ঘটনা খুবই কম। এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা আইনের আওতায় না আসায় এ ধরনের ঘটনা থামছে না।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, দেশে গণপিটুনির ঘটনা আগে ঘটলেও ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর এ ধরনের ঘটনা নতুন মাত্রা পায়। আগে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা বেশি ঘটলেও এ সময় দলবদ্ধভাবে হামলার ঘটনা বেড়েছে, যা ইতিমধ্যে ‘মব’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপর এ ধরনের ঘটনাকে মানুষের রাগক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখেন অনেকে। তবে ছয় মাস পর এসেও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অধিকারকর্মীরা এ জন্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। এর মধ্যে ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া এলাকায় মাইকে ‘ডাকাত পড়ার’ ঘোষণা দিয়ে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দলবদ্ধভাবে গুলশানের একটি বাসায় ঢুকে ‘তল্লাশি’র নামে জিনিসপত্র তছনছ ও লুটপাট করা হয়েছে।

দেশে এ ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধির পেছনে ছয় ধরনের কারণের কথা বলেছেন এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষোভের কারণে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষত পুলিশ ও র‌্যাব এখনো পুরোপুরি কার্যকর নয়। আবার চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভের কারণে অনেকে সন্দেহ করে গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ‘পুলিশের মধ্যে এখনো অস্থিরতা কাটেনি, স্থিতিশীলতা আসেনি। তারা এখনো আত্মবিশ্বাসী নয়। তারা এখনো ব্যবস্থা নিতে দ্বিধাগ্রস্ত। তারা মনে করছে, কোনটা করতে গিয়ে তারা আবার কোন বিপদে পড়েন।’ তাঁরা বলেন, ‘পুলিশে যারা অপরাধ করেছে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেছেন, কোনো অপরাধ করেননি, তারা যেন কোনো শাস্তি না পান। সেটার একটা আশঙ্কা এখনো পুলিশে আছে। সেটা দূর করতে হবে। আর আইনশৃঙ্খলার উন্নতির কাজ পুলিশের, সেনাবাহিনী তাদের সহায়তা করতে পারে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান মনে করেন, ‘মানুষ তখনই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, যখন তুলে নেয়ার সুযোগটা থাকে। এরপর আইনের শাসন ঢিলেঢালা থাকে, তখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতকারীরা সক্রিয় হয়। কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। দুইদিন আগে যে ঢাকায় দুই নারীকে হেনস্তা করা হলোএটাও মব জাস্টিসের বহিঃপ্রকাশ। এটা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে সরকারের দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। আর তাতে এই ধরনের ঘটনা বন্ধ না হয়ে বরং আরো চলতে থাকে।’

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মব জাস্টিস কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি অপরাধীও হয়, তাকে পুলিশের হাতে দিতে হবে। যারা মব জাস্টিসে জড়াচ্ছেন, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন।’

হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি বলেছে, গণপিটুনি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাই দেশের সব নাগরিককে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানিয়েছে এইচআরএসএস। সংস্থাটি বলছে, গণপিটুনির মতো ঘটনা এড়াতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন ও গণপিটুনির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আসলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনাকে কোনোমতেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে