নগরের গণপরিবহন সেবা নিয়ে ৫৪ শতাংশ মানুষ অসন্তুষ্ট। এছাড়া প্রায় ৬৬ শতাংশ নগরবাসী গণপরিবহনে যাতায়াতকালীন সময়ে অসুবিধা বোধ করেন এবং ৬৯ শতাংশ মনে করেন নগরের গণপরিবহন সেবা তাদের জন্য অনিরাপদ। ‘চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহন ব্যবহারকারী যাত্রীদের অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা নিরূপণ বিষয়ক গবেষণা’য় এ তথ্য উঠে আসে। বেসরকারি সংস্থা ইপসা এ গবেষণা পরিচালনা করে। গতকাল এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গণপরিবহণ ব্যবহারকারীরা তাদের অসন্তুষ্টির জন্য অতিরিক্ত ভিড়, যানজট, যানবাহনের স্বল্পতা, অপর্যাপ্ত পরিষেবা, যানবাহনের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ ব্যক্তিদের জন্য কোনো সুবিধা না থাকা, নিরাপত্তার অভাব এবং উচ্চ ভাড়াকে দায়ী করেন।
গবেষণায় ওঠে আসে, ভিড়ের সময় পরিবহন চালকরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি, নারী, গর্ভবতী নারী বা শিশুদেরকে গাড়িতে তুলতে চান না। এছাড়া গণপরিবহন পরিষেবাগুলোতে প্রবীণ, গর্ভবতী নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত বসার জায়গা থাকা সত্ত্বে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব সংরক্ষিত জায়গা ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না। ৮০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন যে, চট্টগ্রামে গণপরিবহন সেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ যাত্রী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠির জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। এছাড়া অত্যাধিক ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে অনেক সময় যৌন হয়রানি, পকেটমার ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ কারণে চলন্ত বাস থেকে যাত্রীরা নেমে যেতে বাধ্য হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সকল ধরনের যাত্রী বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং প্রবীণ জনগোষ্ঠির জন্য গণপরিবহনসমূহে নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবাপ্রদানের চ্যালেঞ্জ এবং দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করা, গণপরিবহনসমূহে বিদ্যমান নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবাসমূহ উন্নয়নের ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করা এবং নগরের গণপরিবহন সেবার গুণগত মান উন্নয়নে নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পাবলিক সেবা প্রদানকারী স্টেকহোল্ডার সক্ষমতা নিরূপণে গবেষণাটি চালানো হয়। এতে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে ইউএনএসকেপ।
গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে– পরিবহন শ্রমিকদের সক্ষমতা উন্নয়ন, সড়ক পরিবহন আইন পরিচিতি এবং অনুসরণ, আসন সংখ্যা অনুসারেই যাত্রী তোলা, নারী–শিশু–প্রতিবন্ধী, প্রবীণবান্ধব পরিবহন সেবা গড়ে তোলা এবং বাস স্টপেজে ভালোভাবে থামিয়ে যাত্রী তোলা নিশ্চিত করা। এছাড়া প্রাইভেট পরিবহন কোম্পানি গঠন, বাসভাড়ায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবস্থা, যাত্রী ও পরিবেশ বান্ধব আদর্শ স্টপেজ নির্মাণ করারও সুপারিশ করা হয়।
এদিকে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনের পাশাপাশি উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাব্য করণীয় বিষয় নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থা, গবেষক, শিক্ষক ও সাংবাদিক, গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিক, গণপরিবহন ব্যবহারকারী বিভিন্ন শ্রেণির জনগোষ্ঠির উপস্থিতিতে গতকাল দিনব্যাপী এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্মসচিব নাজনিন ওয়ারেস। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন–উল ইসলাম চৌধুরী।
ইপসার পরিচালক (সামাজিক উন্নয়ন) নাছিম বানুর পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদুল হাসান, সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল মিশুক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কীর্তিমান চাকমা, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) আতিকুর রহমান, বিআরটিসির ব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. জুলফিকার আলী, চট্টগ্রাম নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) উপ–প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী, ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল এলায়েন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল। এছাড়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউএনএসকেপ’র প্রতিনিধি মদন বি রেজভি, ভারতের সিইপিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিভানন্দ সোয়ামি, নগর বিশেষজ্ঞ মো. নুরুল হাসান ও মো. শাহজাহান।