সীমিত পরিসরের বিধি নিষেধ গতকাল শেষ হয়েছে। আজ থেকে শুরু হচ্ছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। সীমিত পরিসরের বিধি নিষেধে বন্ধ ছিল গণপরিবহন। বুধবার (৩০ জুন) সকাল থেকে অফিসগামী যাত্রীরা পড়েছিলেন তাই চরম ভোগান্তিতে। সড়কে নেই গণপরিবহন, অথচ খোলা অফিস, কারখানা। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেছিলেন পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। পরে পুলিশ এসে তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়। বুধবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে বরাবরের মতোই রিকশা, মোটর সাইকেল আর প্রাইভেট গাড়ি চলছে সড়ক দাপিয়ে। পুলিশ বলছে, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। এই লকডাউনে ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়া যাবে না। বিষয়টি নিশ্চিতে মাঠে পুলিশ কঠোর থাকবে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর।
নগরীর চকবাজার মোড়। সকাল সাড়ে ৯টা। যেকোনো প্রাইভেট কার দেখলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। কাছে গিয়ে জানতে চাইছেন যাওয়া যাবে কি না? কিন্তু অধিকাংশ প্রাইভেট কার ব্যক্তিগত থাকায় যাত্রীদের ক্ষোভের অন্ত ছিল না। অপরদিকে সিএনজি টেঙি চলতে দেখা যায় নতুন ব্রিজের ওই পাড়ে। ভাড়া দ্বিগুণ। ফলে যাত্রীদের মুখ মলিন।
নতুন ব্রিজে কথা হয় অফিসগামী যাত্রী রশীদ আমিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘এটা হলো গরীর মারার লকডাউন। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা চলাচল করছে, কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমাদের তো কোনো গাড়ি নাই। আমরা অফিস যাব কিভাবে? আমার অফিস জামাল খান। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়িও পাচ্ছি না। মোটর সাইকেল বা রিকশায় যেতে ভাড়া চাইছে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
কথা হয় অফিসগামী যাত্রী রাসেল শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই এই কষ্টের কথা আর বলবেন না। অফিস খোলা আবার লকডাউন। কিভাবে চাকরি বাঁচাব বলেন? আমার অফিস আগ্রাবাদ। সকাল ৯টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, কোনো গাড়ি নেই। আর মোটর সাইকেলে যে যাবো, সেই টাকা তো বেতনও পাই না। আমাদের মতো গরীবকে কেউ যেন দেখার নেই।
সড়কে নেই গণপরিবহন, অথচ খোলা পোশাক কারখানা। সময়মতো কাজে যোগ দিতে না পেরে ক্ষুদ্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন পোশাক শ্রমিকরা। সকাল ৮টার দিকে নগরীর টাইগারপাস এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তারা। শ্রমিকদের অভিযোগ, করোনার কারণে সারাদেশে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব গণপরিবহন। কিন্তু খোলা রাখা হয়েছে পোশাক কারখানা। প্রতিদিন কাজে যাওয়ার সময় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। যদি যাতায়াতের ব্যবস্থা না রাখা হয়, তাহলে কেন কারখানা খোলা রাখা হয়েছে? তারা বলেন, রিকশায় দ্বিগুণ ভাড়া দিতে হয়। তাও ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। প্রতিদিনই এমন চিত্র। এদিকে সড়ক অবরোধ করে রাখায় টাইগারপাস মোড়ে তৈরি হয় যানজট। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, গণপরিবহন না থাকায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশ।
এদিকে করোনারভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। তার উপর আজ থেকে শুরু হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে চিন্তা আর হতাশা নেমে এসেছে।
স্বপন নামের চায়ের দোকানদার বলেন, লকডাউন আসলেই তো সবার আগে চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়। লকডাউনে দোকান কিছু কিছু চালিয়েছি। কাল থেকে হয়তো পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হবে। আমার এই দোকানে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। আর এই আয়ের উপর দিয়েই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার জীবন চলা। যদি দোকান বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে যাবে।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বলেন, কঠোর লকডাউনের কথা শোনার পর থেকেই রাতে ঘুমাতে পারি না। খুব টেনশন হচ্ছে। এমনিতেই লকডাউনে অনেক লোকসান হয়েছে। সেই লোকসান পুষিয়ে নিতে ধার-দেনা করেছি। একই সঙ্গে ঋণ নিয়েছি। কিন্তু কঠোর লকডাউনে কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।