গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে নগরীতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২ নম্বর গেট এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরে সমাবেশস্থল থেকে বিক্ষোভ মিছিল জিইসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান আজাদীকে বলেন, ২ নম্বর গেট মোড়ে শিক্ষার্থীরা সকালে আন্দোলন করেছে। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও মিছিল শেষ হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে হাফ ভাড়া সুবিধার পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবে।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো, সড়ক, নৌ ও রেলপথসহ সর্বস্তরে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করা, গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দ্রুত বাতিল করা, পরিবহন খাতে শ্রমিকদের ওপর চলমান সব ধরনের চাঁদাবাজি বন্ধ করা, জ্বালানি তেল ও এলপি গ্যাসের দাম কমানো, রাস্তার ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় ব্যক্তিগত পরিবহন হ্রাস, গণপরিবহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর গণপরিবহনে ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অনেক সিএনজিচালিত বাসও ভাড়া বাড়িয়েছে। আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হতো, সেটা এখন নেওয়া হয় না। হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের ভিক্ষা নয়, অধিকার। অতিরিক্ত ভাড়া বহন করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। সামান্য পথ পাড়ি দিতে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে, যা আমাদের ওপর জুলুম। গ্রাম থেকে এসে আমরা টিউশন করে চলি। টিউশনের টাকা যদি গাড়ি ভাড়ায় চলে যায় তাহলে খাব কী? সারা দেশে গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবি নতুন নয়। এটি আমাদের যৌক্তিক দাবি। তারা বলেন, ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর বাসে হাফ ভাড়া দিতে গেলে বাসের হেলপার নিতে চায় না। শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতিনিয়ত ঝগড়া করে। সরকারকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন করে শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা দিতে হবে।
ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী আবদুল আল জাওয়াদ বলেন, আগে যেখানে পাঁচ টাকা ভাড়া দিতাম, সেখানে এখন দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা। কারণ, আগে ১০ টাকার ক্ষেত্রে হাফ সুবিধায় পাঁচ টাকা দেওয়া যেত। এখন ১০ টাকার ভাড়া বেড়ে ১৫ টাকা হয়েছে। বাস ভাড়া বাড়লেও আমাদের বাবার আয় বাড়েনি। তাই অবিলম্বে গাড়ি ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহনে হাফ সুবিধা বহাল চাই।
বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইফুর রুদ্র বলেন, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার হিসেবে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠিত, যদিও মালিকপক্ষ সবসময় হাফ ভাড়া নিতে নারাজ। আশা করছি, গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়াসহ ৫ দফা দাবি দ্রুত মেনে নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী আদ্রিতা মেহবুব বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশ ছোঁয়া, তার ওপর এখন বাড়তি পরিবহন ভাড়া। আগে যতটুকু খরচ হতো এখন তার দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে।
এদিকে বাস মালিকরা জানিয়েছেন. শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবি মানা সম্ভব নয়। তারা বলছেন, গণপরিবহন ব্যক্তি মালিকানাধীন। ব্যক্তিগত গাড়িতে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব না। সরকার যদি কোনো ধরনের প্রণোদনা কিংবা সুযোগ-সুবিধা দেয়, তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের বাসা ভাড়া, খাওয়ার হোটেল কিংবা অন্য কোনো ক্ষেত্রে সুবিধা পায় না। তারা শুধু গণপরিবহনে হাফ সুবিধা চায়, যেটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ সড়ক ফেডারেশন শ্রমিক ইউনিয়নের (আঞ্চলিক কমিটি) সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ আজাদীকে বলেন, সরকার যদি আমাদের কোনো ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয় আমরা সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করতে পারব। এটা মালিকদের ব্যবসা। অনেকে সারাজীবন সঞ্চয় করে একটি গাড়ি ক্রয় করে এবং সেই গাড়ির আয় দিয়ে তার পরিবার চলে। আমরা অথবা সরকার কীভাবে তার ব্যক্তিগত গাড়িতে হাফ ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবে?












