গণপরিবহনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘শূন্য সহনশীলতা’র নীতি গ্রহণ জরুরি

| সোমবার , ২৯ আগস্ট, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

নারীরা আমাদের দেশে কোথাও নিরাপদ নন। বর্তমানে গণপরিবহনে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে পাবলিক বাসে যাতায়াত অথচ যৌন হয়রানির শিকার হয়নি এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দেশের মহাসড়ক, ফুটপাত কিংবা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলা ফেরার সময় ঠিক কতজন যৌন হেনস্তা শিকার হন তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান জানা যায় না। গণপরিবহন, জনসমাবেশ, রাস্তা-ঘাট, জন সাধারণের সামনে নারী কেবল উত্ত্যক্তের শিকারই হন না, বরং তারা নিগৃহীত, যৌন হয়রানি বা যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এর ভয়াবহতা আমরা দেখতে পাই নানা প্রতিবেদনে।
গত ২৭ আগস্ট দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয় ‘৩৬% নারী গণপরিবহনে নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, বাস, লঞ্চ, ট্রেন, অন্যান্য যানবাহন ও টার্মিনালসহ গণপরিবহনে ৩৬ শতাংশ নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। এছাড়া জনপরিসরে ৮৭ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন হয়রানির শিকার হন। আর ৬৬ শতাংশ নারী কয়েকবার এবং ৭ শতাংশ নারী বারবার যৌন হয়রানিসহ নানা হয়রানির শিকার হন। তবে হয়রানির শিকার ৩৬ শতাংশ নারী প্রতিবাদ করেছেন বলে অনলাইনে পরিচালিত ওই জরিপে উঠে এসেছে। ‘জনস্থানে নিরাপত্তা ক্যাম্পেইন’ সম্পর্কিত অনলাইন জরিপটির ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের রেকর্ড প্রচার করা হয়। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেক্সট মেসেজ, ই মেইলের মাধ্যমে ২৪ জেলার ৫ হাজার ১৮৭ জন নারীর অংশগ্রহণে ইউএনডিপি বাংলাদেশ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) যৌথ উদ্যোগে জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ২৩ শতাংশ নারী রাস্তাঘাটে ও ১১ শতাংশ মার্কেট ও শপিং মলে হয়রানির শিকার হন। আর ১১ শতাংশ নারী অনলাইন প্লাটফর্মে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ নারী উত্ত্যক্তের, ১২ শতাংশ অপ্রত্যাশিত স্পর্শ ও ১১ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার হন। এছাড়া ৪২ ভাগ নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হন। ১৭ ভাগ নারী পাবলিক প্লেসে অশোভন আচরণের এবং ১২ শতাংশ অপ্রত্যাশিত স্পর্শের শিকার হন।
নারীরা আগে ঘরে নির্যাতিত হতেন। আর এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে ঘরে নির্যাতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বাইরেও নির্যাতিত হচ্ছেন! বিশেষজ্ঞদের মতে, যখনই সভ্যতার বিকাশ ও নগরায়ণের কারণে গণপরিবহন ব্যবহারের অপরিহার্যতা তৈরি হলো এবং নারীদের ক্ষমতায়নের কারণে তাঁদের ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়ল, তখন গণপরিবহনে যৌন হয়রানির বিষয়টি নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা হিসেবে যুক্ত হলো। নারীরা বাসে ওঠার সময় বাসচালকের সহকারী ও অন্যান্য পুরুষ যাত্রী দ্বারা অযাচিতভাবে শরীরে বিভিন্নভাবে স্পর্শ, অশ্রাব্য ভাষায় নারীদের লক্ষ্য করে কটূক্তি, ফাঁকা বাসে নারীদের ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। শুধু তা-ই নয়, গাড়িতে ধর্ষণ করে সেই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী নারীকে হত্যা করে নির্জন স্থানে ফেলে যাওয়ার মতো ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।
নারীরা যেখানে ঘর ও কর্মক্ষেত্রের বাইরে গণপরিবহনে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানে দিন দিন ক্রমবর্ধমান হারে গণপরিবহনে নারী হয়রানির ঘটনাবৃদ্ধি রীতিমত উদ্বেগজনক। এভাবে বাড়তে থাকলে একসময় নারী নিরাপত্তা সম্পূর্ণ হুমকির মুখে পড়বে, যা একটা দেশের সুশাসনের মানদণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, রাস্তা-ঘাট, গণপরিবহনসহ সর্বত্র উদ্বেগজনকভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের ভয়াবহতা বেড়েছে। নারীরা স্বাধীন চলাফেরায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণের জন্য ‘শূন্য সহনশীলতা’র নীতি গ্রহণ প্রয়োজন।
পত্রিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এই জরিপের ভিত্তিতে আমরা বলতে চাই, যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এগুলোর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত। কেননা, এসব ছোট ছোট সামাজিক অবক্ষয় এক সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। গণপরিবহনের মালিক শ্রমিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় ন্যূনতম সংকট নিরসন হবে বলে আমরা আশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে