গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬৭–১৯৩৮)। ভারতবর্ষে আধুনিক শিল্পযাত্রার অন্যতম পথিকৃৎ। চিত্রশিল্পী। শিল্পরসিক ও মঞ্চাভিনেতা হিসেবেও তাঁর সুনাম রয়েছে। চিত্রবিদ্যাচর্চা ও আধুনিকতার জিজ্ঞাসায় চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এক নবীন মাত্রা সঞ্চার করেছিলেন তিনি। প্রাচ্যের ধারার সাথে পাশ্চাত্যের মেলবন্ধনে তাঁর শিল্প হয়ে উঠেছিল স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য। ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ সেপ্টেম্বর গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়ার পর তাঁর স্কুলের পড়াশুনা বন্ধ হয়, তার বদলে শুরু হয় জমিদারির কাজ এবং সে সঙ্গে পরিবারের প্রধান হিসেবে সামাজিক দায়–দায়িত্ব পালন। কিন্তু এতদসত্ত্বেও ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সাহিত্যে তাঁর ছিল প্রবল আগ্রহ। নিজের বাড়িতেই তিনি বিশাল এক গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। স্কুলের বন্ধন ছিন্ন হওয়াতেই তিনি স্ব–শিক্ষার সুযোগ পান, যেমনটি পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরিবারে ছবি আঁকার রীতি ছিল। গগনেন্দ্রনাথ ছবি আঁকা শেখেন হরিনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তবে শিল্পী জীবনে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা তাঁকে দিয়েছিল স্বকীয়তা। পাশ্চাত্যের বৃহত্তর ভুবন তাঁর শিল্পসত্তা ও মানসযাত্রায় প্রভাব ফেলেছিল। কখনো ইউরোপীয় ধাঁচে, কখনো ফরাসি ঘরানায়, কখনো জাপানি ঐতিহ্য থেকে উপাদান সংগ্রহ করেছেন তিনি। প্রতিকৃতি, দৃশ্যচিত্র, বিমূর্ত চিত্র, ব্যঙ্গ চিত্র– চিত্রকলার নানা দিক নিয়ে কাজ করেছেন গগনেন্দ্রনাথ। সকল ক্ষেত্রেই পরিচয় মেলে তাঁর মেধা ও মননের, উদ্ভাবনী শক্তির। ব্যঙ্গচিত্রী হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। অভিনয়েও ছিলেন দক্ষ শিল্পী। রবীন্দ্রনাথের অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন গগনেন্দ্রনাথ। সর্বোপরি সামাজিক দায়বদ্ধতা আর অঙ্গীকারের চেতনায় চালিত হয়েছিল তাঁর শিল্পীসত্তা। তৎকালীন সম্ভ্রান্ত সমাজ নিয়ে বেশ কিছু ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিলেন তিনি।
১৯০৫–এ যুক্ত ছিলেন স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে। ‘ভোঁদর বাহাদুর’ নামে তাঁর একখানা শিশুপাঠ্য গ্রন্থ রয়েছে। আর ব্যঙ্গচিত্রাবলীর অনেকগুলিই ‘বিরূপ বজ্র’, ‘অদ্ভুতলোক’, ‘নবহুল্লোড়’, ‘রিফর্ম স্ক্রিম’ প্রভৃতি গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।