খেলাধুলার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার কোন সুযোগ নেই। এ কথা যারা খেলেন তারা যেমন জানেন তেমনি যারা খেলাধুলার আয়োজন করেন তারা আরো ভালো করেই জানেন। কিন্তু সেটা জানলেও কেউ তা মানেন না। শুধু যে মানেন না তা নয়, ক্ষেত্র বিশেষে খেলার উদ্বোধনী কিংবা সমাপনীকে রাজনৈতিক সমাবেশ বানিয়ে ফেলেন। মাস খানেক আগে শেষ হয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। কাতারে অনুষ্ঠিত সে আয়োজনের উদ্বোধনীতে কাতারের আমির দুটি লাইন বলে ফুটবল মহাযজ্ঞের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। আর সমাপনীতেতো কোন কথাই ছিল না। শুধু তাই নয় কদিন আগে ঢাকায় উদ্বোধন করা হয় চলমান বিপিএলের।
সেখানেও কোন কথা ছাড়াই কেবল বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করা হয় বিপিএলের। কিন্তু চট্টগ্রামের আয়োজকরা সে সবের যেন ধারও ধারতে চান না। গতকাল চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে শেখ কামাল যুব গেমসের দ্বিতীয় আসরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্ব চলেছে প্রায় এক ঘন্টা। ১০ টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্ব শেষ হয়েছে ১১ টা ৩৫ মিনিটে। এই দীর্ঘ সময়ে বক্তব্য রেখেছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, বিসিবি পরিচালকের মত ব্যক্তিত্ব।
কিন্তু তারা বক্তৃতায় এতটাই মগ্ন ছিলেন যে, যে সব বাচ্চাদের নিয়ে আয়োজন সে সব বাচ্চারা কতটা বিরক্ত হচ্ছে বা তাদের কতটা কষ্ট হচ্ছে সেদিকে খেয়াল রাখার যেন সময়ই নেই। তাই দেখা যায় বক্তব্য চলাকালে বাচ্চারা কেউ বসে পড়েছেন, কেউবা এদিক ওদিক বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ তাদেরকে যে বক্তাদের সামনে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। তাদেরতো আর নড়াচড়ার কোন সুযোগ নেই। অথচ উদ্বোধনের পরপরই যে খেলতে নামতে হবে সে বোধটাও নেই বক্তাদের।
তারা সমানে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। কেউবা অতিথিদের নামের বিশেষণ দিতে গিয়ে লম্বা সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। অবস্থা এমন যে ধার করে এনে বলবে কে কাকে কতটা বিশেষনে বিশেষায়িত করতে পারে। মূলত সে প্রতিযোগিতাই যেন চলছিল। অথচ তাদের সামনে এক নাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষুদে ক্রীড়াবিদদের অবস্থাটা কেমন হচ্ছে সেটা ভাবার যেন সময় নেই। বক্তাদের এই অত্যাচারের মাঝে ক্রীড়াবিদদের হাতে দেওয়া বেলুনগুলো ছেড়ে দিয়ে যেন তারা নীরব প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। দীর্ঘ এক ঘন্টার অনুষ্ঠানে বক্তাদের সবাই কেবলই সরকারের উন্নয়ন কিংবা অতিথিদের প্রশংসাই কেবল করেছেন।
খেলাধুলার বিষয়ে কথা হয়েছে গুটি কয়েক। আর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্ষুদে ক্রীড়াবিদদের সে সব গিলতে হয়েছে। আর এ সবের মাধ্যমে সমাজের এসব উচ্চ পদস্থ মানুষগুলো বাচ্চাদের কাছে কি বার্তা দিয়েছেন বা দিতে পেরেছেন সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন। কেউ কেউ ক্ষুদে এসব ক্রীড়াবিদদের উদ্দেশে বলেছেন তারা যেন নিয়ম, কানুন, সময় এসব মেনে চলেন। কিন্তু যিনি বলছেন তাঁর নেই সময়ের প্রতি কোন জ্ঞান।
তাঁর নেই খেলাধুলার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা। তিনি আইন মানতে বলছেন ক্ষুদে ক্রীড়াবিদদের! অবশ্য এই ধারাটি চট্টগ্রামেই বেশি হয়ে থাকে। লাইন ধরে কর্মকর্তাদের মঞ্চে দাঁড়াতে হবে। সমানে বক্তব্য রাখতে হবে। এ যেন চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কৃতি। যা খুবই বাজে এবং দৃষ্টিকটূ। এখানে আবার স্পন্সর কিংবা পৃষ্ঠপোষকদের চাইতে কর্মকর্তাদের গুরুত্ব বেশি। কার টাকায় লিগ কিংবা টুর্নামেন্ট চলছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা যেন আমি কিংবা আমরা আয়োজন করছি। আর আমরাই সর্বেসর্বা। আর এভাবেই হয়তো চলতে থাকবে। তাইতো অনেকেই বলেন এদের জ্ঞান দাও প্রভু আর আমাদের ক্ষমা করো।