সামরিক কর্তৃপক্ষের ১১৫ নং আদেশে বলা হয় প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে যেসব সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের বেতন দেয়া হয়, তাদেরকে অবশ্য ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে কাজে যোগ দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। বিচারে তাদেরকে সর্বাধিক ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হবে। বাঙালি সামরিক বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই আদেশের পরোয়া করেননি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সামরিক নির্দেশ জারির পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক বিবৃতিতে এই আদেশকে উস্কানির শামিল বলে আখ্যা দেন। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, যখন আমরা সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের প্রচণ্ড দাবির কথা ঘোষণা করেছি ঠিক তখন নতুন করে এ ধরনের সামরিক নির্দেশ জারি পক্ষান্তরে জনসাধারণকে উস্কানি দেয়ার শামিল। ন্যাপের সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান ও ন্যাপ নেতা গাউস বঙ্গ বেজেঞ্জো সকালে করাচি থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ন্যাপ প্রধান বলেন, বর্তমান সঙ্কট উত্তরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমি খোলা মনে ঢাকায় এসেছি। সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একমত। চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ও সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল হাকিম পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব ও পদক বর্জন করেন। ঢাকায় জাতিসংঘ ও পশ্চিম জার্মান দূতাবাসের কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গসহ ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার ২৬৫ জন নাগরিক বিশেষ বিমানে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশ ত্যাগকারীদের বাড়ি-গাড়ি-সম্পদ কিনে বাংলার অর্থ বিদেশে পাচারে সহযোগিতা না করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আফাজউদ্দিন ফকির এক বিবৃতিতে ‘লেটার অব অথরিটি’ দ্বারা ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আহ্বান জানান। তিনি অবিলম্বে পূর্বাঞ্চলের প্রতিরক্ষা বাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব একজন বাঙালি জেনারেলের কাছে হস্তান্তর, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সবকটি ব্যাটিলিয়ন পরিচালনার কর্তৃত্ব বাঙালি অফিসারদের হাতে অর্পণ এবং বিগত এক মাসে পূর্ববাংলায় যে অতিরিক্ত পাকিস্তানি সৈন্য আনা হয়েছে তাদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে শীর্ষস্থানীয় ছাত্রনেতা আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান ও ফজলুল হক মণির সঙ্গে বৈঠক করেন। বঙ্গবন্ধু তাদের কলকাতার ভবানীপুরের নদার্ন পার্কের ২১ রাজেন্দ্র রোডের একটি বাসার ঠিকানা দেন এবং বলেন এই বাসাই হবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার মূলকেন্দ্র। তাজউদ্দীন আহমদ সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন এবং দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এদিন। বৈঠকে অবিসংবাদিতভাবে গোপনে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।