রমজান এলে বেড়ে যায় খেজুরের চাহিদা। চলতি বছরের শুরুতে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি শুল্কায়ন মূল্যও ৮ থেকে ২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। এ বছর খেজুর আমদানি হয়েছে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে এবার মানভেদে প্রতি কেজিতে খেজুরের দাম কমেছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
গতকাল ফলমণ্ডি ও খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বর্তমানে সৌদি, ইরান, মিশর, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও দুবাই থেকে আমদানিকৃত জাহিদি, সায়েদি, ফরিদি, সাফায়ি, রশিদি, মাশরুখ, মাবরুর, নাগাল, কুদরি, আজওয়া, মেদজুল, মরিয়ম, দাব্বাস, সুক্কারিসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর রয়েছে। বর্তমানে বাজারে নাগাল ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়, তিউনিসিয়ার টেটকো ফরিদি পাঁচ কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া সৌদি আরবের পাঁচ কেজি মাশরুখ খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। মাশরুখ–বি ব্র্যান্ডের পাঁচ কেজির খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। মাশরুখ ভিআইপি বিক্রি হয়েছে পাঁচ কেজি দুই হাজার ৭০০ টাকায়। ইরানি মরিয়ম খেজুর পাঁচ কেজি বিক্রি হচ্ছে চার হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায়, সৌদি আরবের মাবরুর খেজুর সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, ৫ কেজি সৌদি আজওয়া খেজুর ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা, মিশরের মেদজুল খেজুর পাঁচ কেজি ৩ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা, ইরাকি জাহিদি খেজুর ১০ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া বস্তা খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি শুল্কায়ন মূল্যও ৮–২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এ বছর খেজুরের আমদানি ব্যয় ২০–২৫ শতাংশ কমেছে। এবার খেজুর আমদানিতে বেশ কয়েক স্তরের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বর্তমানে সর্বনিম্ন স্তরে ৭০ সেন্ট থেকে শুরু করে ৪ ডলারেও খেজুর শুল্কায়ন হচ্ছে, যা গত বছর ছিল এক থেকে চার ডলার পর্যন্ত। সরকার শুল্ক কমালেও ডলারের দাম টাকার চেয়ে বেশি হওয়ায় আমদানিতে দামের তেমন হেরফের হয়নি। তবে গত বছরের চেয়ে এবার আমদানি দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছর দাম বেশি থাকলেও প্রতি কেজি ৪ ডলারের শুল্কায়ন হওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছিল। যে কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখেও পড়েছিল।
এদিকে, চলতি ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের পহেলা জুলাই থেকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর আমদানি হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৬৮ টন। গত ২০২৩–২০২৪ অর্থবছর একই সময়ে খেজুর আমদানি হয়েছিল ২৫ হাজার ৮৫ টন, ২০২২–২০২৩ অর্থবছরে খেঁজুর আমদানি হয়েছে ৮১ হাজার ৬৮৪ টন এবং ২০২১–২০২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৮৮ হাজার ৬০২ টন।
খেজুর আমদানিকারকরা বলছেন, শুধু রমজান মাসে সারাদেশে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন খেজুরের চাহিদা থাকে। এক সময় রমজানের বাইরে খেজুরের চাহিদা না থাকলেও এখন সারা বছর খেজুরের চাহিদা থাকে। তবে কম দামি খেঁজুরের সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে রমজান মাসেই।
খাতুনগঞ্জের খেজুর ব্যবসায়ী মেসার্স আল মদিনার স্বত্বাধিকারী এহসান উল্লাহ জাহেদী আজাদীকে বলেন, খেজুরের ব্যবসা রমজান এলে চাঙ্গা হয়। বাকি ১১ মাস তেমন চাহিদা থাকে না। আমরা আমদানিকারকের কাছ থেকে খেজুর নিয়ে বিক্রি করি। তবে এবার দাম নিম্নমুখী রয়েছে।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, খেজুরের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। এ বছর প্রচুর আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অবিক্রিত খেজুরও বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে ছিল। সব মিলিয়ে দাম নিম্নমুখী।
চট্টগ্রাম ফল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, খেঁজুরের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও একেক ব্যাংক একেক দরে ডলারের দাম নেয়ার কারণে খেজুরের আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে।