কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত–সহিংসতার জেরে কারফিউ জারি করে সরকার। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরীতে সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত শিথিল ছিল কারফিউ। এ সময়ের মধ্যে তিনদিন পর চালু হয় সব শিল্প কারখানা, সরকারি–বেসরকারি অফিস, আদালত ও ব্যাংক–বীমা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া খুলেছে বিভিন্ন শপিংমল–মার্কেট। এতে গতকাল থেকে পুরো নগরীতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। সড়কে ছিল যানবাহনের চাপ। অনেক জায়গায় যানজট দেখা দেয়। এছাড়া নগরীর দামপাড়া বাস স্টেশন ও কদমতলী বাস স্টেশন থেকে দূরপাল্লার বেশ কিছু বাস ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। অপরদিকে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জেও স্বাভাবিকতা ফিরেছে। গতকাল সকাল থেকে শ্রমিকদের হাঁকডাকে কর্মমুখর হয়ে উঠে প্রাচীন বাজারটি।
গতকাল সকালে সরেজমিনে নগরীর বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চকবাজার, জিইসি মোড় ঘুরে দেখা গেছে, কর্মজীবী নারী–পুরুষ ব্যক্তিগত গাড়ি, গণপরিবহন, সিএনজি ও রিকশাযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটছেন। মানুষের আনাগোনায় গত ক’দিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা নগরী প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে। মুরাদপুর এলাকায় কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সৈয়দ নুরের সঙ্গে। তিনি জানান, আজকে (গতকাল) কারফিউ শিথিল হওয়ায় অফিস খুলেছে। সকালে গাড়ি পাবো কিনা, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু সড়কে এসে দেখি, পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। আবুল হোসেন নামের এক যুবক বলেন, মামলা সংক্রান্ত কাজে কোর্ট বিল্ডিং যাচ্ছি। সবকিছু স্বাভাবিক আছে, তারপরও সিএনজি ও রিকশাওয়ালারা বেশি ভাড়া হাঁকছেন। নগরীর ওয়াসা মোড়ে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমার ব্যাংক বোয়ালখালীতে। এ কয়েকদিন খুব আতঙ্কে কেটেছে। তবে এখন রাস্তায় বের হয়ে মনে হচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
এদিকে গতকাল থেকে ইপিজেড এলাকার পোশাক কারখানাও খুলেছে। আগেরদিন পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা জানান, কারফিউর মধ্যেও কারখানা মালিকরা চার শতাধিক কারখানা চালু করে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র প্রথম সহ–সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ইপিজেডসহ মিলিয়ে আমাদের ছয়শর মতো পোশাক কারখানা আছে। সবগুলোই আজ (গতকাল) চালু ছিল। এসব কারখানাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ শ্রমিকের উপস্থিতি ছিল। এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও চালু হয়েছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত পরিস্থিতি আগের মতো স্বাভাবিক হবে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুস সোবহান বলেছেন, কারখানায় কাজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কর্ণফুলী ইপিজেডের কারখানাও চালু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন।
শিল্প পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ইপিজেডের ভেতরে এবং বাইরে অলমোস্ট সব কারখানা খোলা ছিল। ইপিজেডের বাইরে প্রায় সাড়ে চারশ পোশাক কারখানা আছে। আমাদের মনিটরিং টিম প্রায় সব কারখানাই খোলা পেয়েছে।
অপরদিকে কারফিউ শিথিল থাকায় গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন শপিংমল মার্কেট ও দোকানপাট চালু করা হয়। বাংলাদেশ দোকান মালিক মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সালামত আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের হিসেবে আজ (গতকাল) ৮০ শতাংশ দোকানপাট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু দোকানের কর্মচারী কাজে যোগ দিতে পারেনি, তাই কিছু সংখ্যক দোকান খুলতে পারেনি। কারফিউ পুরোপুরি শিথিল হলে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও শতভাগ স্বাভাবিক হবে। এছাড়া গতকাল থেকে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক–কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য উঠানামা স্বাভাবিক হচ্ছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, চাক্তাই খাতুগঞ্জে পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ বেড়েছে। ধীরে ধীরে কার্যক্রমও স্বাভাবিক হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নয় ঘণ্টা চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলাগুলোতে কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।