এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় উপকমিটির সমন্বয়ক মোতালেব শিকদারকে (৪২) প্রকাশ্যে গুলি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অনিমেষ মণ্ডল জানিয়েছেন। এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু এক ফেসবুক পোস্টে রক্তাক্ত মোতালেব শিকদারের একটি ছবি প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, এনসিপির খুলনা বিভাগীয় প্রধান এবং এনসিপি শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও মোতালেব শিকদারকে একটু আগে গুলি করা হয়েছে। খুলনার সার্জিক্যাল এলাকায় আক্রান্ত হওয়ার পর স্থানীয়রা মোতালেব শিকদারকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিদর্শক অনিমেষ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতাল পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা বিস্তারিত পরে জানাব। খবর বিডিনিউজের।
সঙ্গী নারী আটক : বাংলানিউজ জানায়, মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত নারী তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গতকাল রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিডিনিউজ জানায়, এর আগে মোতালেব শিকদারকে গুলির ঘটনায় তার সঙ্গে থাকা নারী সঙ্গীকে খুঁজছিল পুলিশ। তাদের বাসা থেকে পুলিশ বিভিন্ন মাদকের আলামত সংগ্রহ করেছে। এদিকে চিকিৎসক জানিয়েছেন, মোতালেব শঙ্কামুক্ত।
খুলনা মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, তারা এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে।
মোতালেব শিকদার সোনাডাঙ্গা শেখপাড়া পল্লী মঙ্গল স্কুল এলাকার মৃত মোসলেম শিকদারের ছেলে। তিনি জাতীয় শ্রমিক শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, আল আকসা মসজিদ স্মরণির ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় গুলির ঘটনা ঘটেছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, শনিবার রাত থেকে মোতালেব টানা সেই ফ্ল্যাটে ছিলেন।
সোনাডাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অনিমেষ মণ্ডল বলেন, ঘটনার পর পরই উপস্থিত জনতা তাকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যান। পরে মাথার সিটি স্ক্যান করার জন্য তাকে সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। গুলিটি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। এতে রক্তক্ষরণ হলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, তার মাথার বাম পাশে গুলি লেগেছে। হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ড্রেসিংরুমে তার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়েছে।
মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার সাংবাদিকদের বলেন, স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী এক মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা–যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেওয়া হয়। ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটল।
ঘটনার পর থেকে তন্বী নামের ওই নারী পলাতক রয়েছেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে পুলিশ। খুলনা মহানগর পুলিশের উপ–কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ওই ফ্ল্যাট থেকে মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদে বাকিদের নাম জানা যাবে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এনসিপি খুলনা মহানগরের সংগঠক সাইফ নেওয়াজ বলেন, মোতালেবকে খুব কাছ থেকে মাথায় গুলি করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে খুলনায় একটি বিভাগীয় শ্রমিক সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেটা নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন।












