খুলছে বঙ্গবন্ধু টানেলের স্বপ্নদুয়ার

দক্ষিণ টিউবের কাজের সমাপনীতে আজ বর্ণাঢ্য উদযাপন ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে খুলছে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের স্বপ্নদুয়ার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এই টানেলের দক্ষিণ টিউবের কাজের সমাপনীতে আজ শনিবার থাকছে বর্ণাঢ্য উদযাপন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে এই উদযাপনের সূচনা করবেন। সেতু সচিব মো. মনজুর হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপনী উদযাপন করবেন। কর্ণফুলী টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে শনিবার সকাল ১০টায় এই উদযাপন অনুষ্ঠান হবে। টানেলের ‘সাউথ টিউব’ দিয়ে আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরে এবং উজানের দিকের ‘নর্থ টিউব’ দিয়ে চট্টগ্রামের নেভাল একাডেমির দিক থেকে আনোয়ারার দিকে যানবাহন চলাচল করবে। বঙ্গবন্ধু টানেল ঢাকা থেকে কঙবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ৫ মিনিটেই চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে যাওয়া যাবে আনোয়ারায়।

দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজ সমাপনী উদযাপনে সব ধরনের প্রস্তুতি আগেই সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সঙ্গে ছিলেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। টানেলের সামগ্রিক গুরুত্ব তুলে ধরে তারা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে। এক নগর, দুই শহর নকশার ভিত্তিতে চীনের সাংহাই নগরীর মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এতে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে এবং জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

টানেল প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ভেতরের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং শুধু বৈদ্যুতিক লাইন ও কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বন্দর এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বিমানবন্দরের সঙ্গে একটি উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পূর্বাঞ্চলের শিল্প কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে সময় ও খরচ কম লাগবে। তিনি বলেন, এখন প্রতিটি সিস্টেম কাজ করছে আলাদাভাবে। তারপর এগুলো আমাদের কন্ট্রোল সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রথম টিউব ১৭ মাস লাগলেও পরেরটা ১০ মাসে সম্পন্ন হয়েছে। করোনার জন্য আমরা এক মাস কাজ করতে পারি নাই।

টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেডের মধ্যবর্তী স্থানে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।

মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলোতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণ করছে সরকার। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজার হয়ে ট্রান এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্কের যে সম্ভাবনা তা আরো বেগবান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

টানেল উদ্বোধনের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই পাল্টে যাচ্ছে পুরো এলাকার চেহারা। এর মধ্যে ৬ লেনের টানেল সংযোগ সড়কের মধ্যে চারটি লেন যান চলাচলের জন্য প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে। ব্যবসায়িক ও উন্নয়ন কর্মযজ্ঞে পুরো এলাকায় এখন সাজ সাজ রব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজানুয়ারিতে চলবে গাড়ি
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায় : প্রধানমন্ত্রী