রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছামতি নদীর সংযোগস্থল থেকে গুমাই বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কুরমাই খাল। এটি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কাটাখালি হাশেম খালের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বর্তমানে দখল দূষণে খালটির বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি খালটির রোয়াজারহাট অংশের একটি স্লুইচগেট ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ক্রমাগত দখল ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদারকির অভাবে কুরমাই খাল এখন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ইছামতি নদী থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শষ্যভান্ডার খ্যাত গুমাই বিলে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে কুরমাই খাল খনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। খালটি বর্তমান মুরাদনগর পৌর এলাকার অর্ধ কিলোমিটার ও কুরমাই পৌর এলাকার দেড় কিলোমিটার অংশজুড়ে বিস্তৃত। ইছামতি নদীর সংযোগস্থল থেকে গুমাই বিলের মাঝ দিয়ে খালটি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কাটাখালি হাশেম খালের সঙ্গে মিলিত হয়। তখন থেকে খালটি গুমাই বিলে পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো চাষাবাদের সময় ১৪ স্কিমের মাধ্যমে সেচযন্ত্র দিয়ে এই খাল থেকে সেচ দেওয়া হয়। পাউবোর রাঙ্গুনিয়া কার্যালয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা তদারকি করে।
সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাউবোর কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব ও অবহেলায় খালটি দিনের পর দিন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বাড়ির খড়কুটা, ছেঁড়া কাপড়, পলিথিন, মরা গরু, ছাগল, হাট-বাজারের আবর্জনা নিয়মিত ফেলা হচ্ছে। এমনকি অনেকে দোকান ও বাড়ির মলমূত্রের ট্যাংকের নল দিয়ে এখানে আবর্জনা ফেলছেন। এতে খাল ভরাট হয়ে ইছামতি থেকে পানি ঢুকতে পারছে না। ফলে গুমাই বিলের সেচ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খননের ২৮ বছর পর ২০০৮ সালে শুষ্ক মৌসুমে পাউবো একবার গুমাই বিলে সেচ দেওয়ার জন্য খালটি খনন করলেও এর তলা থেকে মাটি কাটা হয়নি। খালের দুই পাড়ে ঘাস পরিষ্কার করে খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। এর ফলে পুনরায় ফেলা আবর্জনায় খালটি আবার ভরে যাচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক নুরুল আবছার জানান, শুধুমাত্র রোয়াজারহাট এলাকায় এই খালের উপর খুঁটি গেড়ে অর্ধশতাধিক দোকান নির্মিত হয়েছে। একই কায়দায় মুরাদনগর ও সৈয়দবাড়ি এলাকায়ও খালটি দখল করে নির্মিত হয়েছে দোকান, ঘর ও নানা স্থাপনা। ফলে দিন দিন সংকুচিত হয়ে খালটি বর্তমানে ৮-১০ ফুট প্রশস্ত নালায় পরিণত হয়েছে। খাল দখল করে নির্মিত স্থাপনার বাথরুমের বর্জ্য, নানা আবর্জনা এই খালের উপরই ফেলে খালটিকে মৃতপ্রায় করে তুলেছে। বর্তমানে খালটিতে জোয়ারভাটাও হয় না। সৈয়দবাড়ি ও ইছামতি এলাকার মোহন্দর খালের কিছু পানি ঢুকে এই মৃতপ্রায় খালটিতে প্রকৃতপক্ষে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
মো. ইসহাক (৬০) নামে গুমাইবিলের এক কৃষক বলেন, দীর্ঘদিন খালটি ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। এখন এতে ইছামতির পানিও ঢোকে না আর আমরাও সেচ কাজে পানি পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গুমাইবিলের পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, কুরমাই খাল দ্রুত খনন করা না হলে এটি অচিরেই ভরাট হয়ে যাবে। এই ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা আবেদন করে আসছি। সম্প্রতি খাল খননের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
রাঙ্গুনিয়া পৌর মেয়র মো. শাহজাহান সিকদার বলেন, খালে মলমূত্র ও ময়লা-আবর্জনা না ফেলার জন্য খালপাড়ের বাসিন্দাদের মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এটি সংস্কারে পাউবোর কাছে পৌরসভার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কাপ্তাই পওর উপবিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, কুরমাই খাল খননের জন্য সমপ্রতি একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত খনন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এছাড়া খাল দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। শীঘ্রই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।