খাল-নালায় ময়লা ফেললেই শাস্তি

চসিকের সাথে অভিযানে অংশ নেবে সিডিএ মেগা প্রকল্পে সমন্বয়ে কাজ করতে ঐকমত্য

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ মার্চ, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

পরিষ্কার করার কিছুদিন পরই ভরাট হয়ে যায় নগরের খালগুলো। নগরবাসীর অসচেতনতা এ জন্য অনেকাংশে দায়ী। কারণ খাল-নালায় ময়লা-আবর্জনায় ফেলে তারা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রসহ সংশ্লিষ্টরা বারবার আহ্বানের পরেও বিষয়টি আমলে নেয় না জনগণ। তাই এবার কঠোর অবস্থানে যাবে চসিক। চালাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে খাল-নালায় যারা ময়লা ফেলবে তাদের দণ্ডিত করা হবে। এতে অংশ নিবে সিডিএও। নগরে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও থাকবেন সেখানে। অর্থাৎ খাল-নালা পরিষ্কার নিশ্চিতে যৌথভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
চসিক ও সিডিএর যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশ নেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিতে পৃথক দুটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে চলমান মেগা প্রকল্পের সুফল নিশ্চিতে সমন্বয়ভাবে কাজ করতে একমত হয়েছেন দুই সংস্থা প্রধান। এছাড়া যেসব স্পটে বেশি ময়লা ফেলা হয় সেখানে নজরদারি বাড়াতে সিসিটিভি স্থাপন নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সমন্বয় করে এগিয়ে গেলে পরিকল্পিত শহর গড়া যাবে। তিনি বলেন, আগামী বর্ষার আগেই শহরের বিভিন্ন খালে মেগাপ্রকল্পের কাজের সুবিধার্থে যেসব বাঁধ দেয়া হয়েছে সেগুলো অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় জলাবদ্ধতার জন্য কষ্ট পাবে মানুষ। তিনি বলেন, বাঁধ থাকায় বদ্ধ পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ ধৈর্য ধরছে না। মশা বাড়ছে। ৩ মিটারের বেশি খাল-নালা পরিষ্কার আমরা করলাম, সিডিএও করলে অর্থের অপচয় হবে।
তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শাস্তির আওতায় আনা হলে খালে ময়লা ফেলার প্রবণতা কমবে। কিছু জায়গায় অভিযান হলে অন্যরা ভয় পাবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে ১০ পার্সেন্ট লোক অসন্তুষ্ট হলেও বাকিরা সন্তুষ্ট হবে। মেয়র বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত খাল-নালা পরিষ্কার করতে হবে সিডিএকে। আমাদের এখতিয়ারে যেগুলো আছে সেগুলো আমরা করব। শহরের তিন মিটারের বেশি খালগুলো মেগাপ্রকল্পের আওতায় পরিষ্কার করতে হবে।
মেয়র বলেন, চসিকের জনবল ও সরঞ্জাম রয়েছে যা সিডিএর নাই কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা ততটুকু নেই। তিনি আরো বলেন, ১০০ দিনের অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে চসিক যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা চলমান রয়েছে।
জহিরুল আলম দোভাষ মেয়রকে বলেন, পরিষ্কার আপনারাও করবেন। বড় খালগুলো হ্যান্ডওভার না করা পর্যন্ত আমরা করে দিব। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ’র মধ্যে সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। বড়পোল থেকে চৌচালা হয়ে আউটার রিং রোডের সংযোগে সিডিএ রাস্তা করার পরিকল্পনা নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়াসা সেটা বন্ধ করতে চাচ্ছে। বন্ধ করা যাবে না। করলে রিং রোডের সুফল মিলবে না। এক্ষেত্রে সিটি কর্র্পোরেশনের সহযোগিতা চায়।
তিনি বলেন, নগরীর ৩৬টি খাল পুনরুদ্ধারে কাজ করছি আমরা। এর মধ্যে ২২টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে প্রকল্প কাজ চলমান রয়েছে। আগামী জুন মাসের আগে সিডিএ খালগুলোর পানি চলাচলের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করবে। তিনি উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীদের নিয়ে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের উপর জোর দেন।
সমন্বয়ে হবে দুই কমিটি : বৈঠকে চসিক-সিডিএ’র সমন্বয় নিশ্চিতে দুটি পৃথক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশলীদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি নিশ্চিত করবে একই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য দুই সংস্থার গৃহীত প্রকল্পগুলো যেন এক না হয়। এক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, চসিকও ফিজিবিলিটি স্টাডি করে ডিপিপি তৈরি করেছিল। সিডিএ’ও করে। শেষ পর্যন্ত সিডিএ’র প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। মাঝখানে চসিকের পরিশ্রম কাজেই এল না। তাই ভবিষ্যতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে এ ধরনের বিড়ম্বনা এড়াতে কাজ করবে কমিটি। এছাড়া আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে পৌরকর সংক্রান্ত বিষয়ে। কমিটি বসে সিডিএ’র উপর ধার্যকৃত পৌরকর নির্ধারণ করবে।
চসিক স্থপতি আবদুল্লাহ ওমর বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লটে ভবন অনুমোদনের সময় রাস্তা প্রশস্তকরণে ভূমির যে ছাড়পত্র দেয় তা সিটি কর্পোরেশনকে সিডিএর বুঝিয়ে দেয়া দরকার।
শেষ হওয়া কাজ বুঝে নিতে অনুরোধ : মেগাপ্রকল্পের যেসব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তা সিটি কর্পোরেশনকে বুঝে নিতে আহ্বান জানান মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান চসিকের প্রকৌশলীরা। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে আমাদের বুঝে নিতে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের তো মেইনটেনেন্স’র বরাদ্দ নাই। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই আমরা বুঝে নিব। এখন সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগে বুঝে নিলে কোথাও সমস্যা দেখা দিলে একজন আরেকজনকে ব্লেইম করবে। একজন বলবে, সিডিএ’র কাজ, আরেকজন বলবে চসিকের।
ওয়াসার সমালোচনা : যত্রতত্র সড়ক কাটা নিয়ে ওয়াসার সমালোচনা করা হয় বৈঠক থেকে। সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন সামস বলেন, ওয়াসা যে পরিমাণ সড়ক কাটার অনুমতি নেয় তার বেশি নষ্ট করে ফেলছে। তারা যখন আবার কাটা সড়ক ভরাট করে তখন চসিকের তদারকি থাকে না। সাব কন্ট্রাক্টর দিয়ে কাজ করায় এ সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টা মন্ত্রণালয়কে জানান। তিনি বেশি ময়লা ফেলে এমন স্থানে সিসিটিভি স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদও অনুমতির চেয়ে বেশি পরিমাণে সড়ক কাটার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মাঝখানে ওয়াসার কাজ বন্ধ করে দিই। তখন তারা মন্ত্রণালয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। তাদের স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে শতভাগ রাস্তা কাটবে। তিনি বলেন, সড়ক কাটার জন্য ওয়াসা যে ক্ষতি পূরণ দেয় তা গণপূর্তের রেইটের চেয়ে কম। তারা যে রেইট দেয় তাতে অর্ধেক কাজও হয় না। মন্ত্রণালয়ে রিভাইস রেট পাঠিয়েছি। দেড় বছরেও সাড়া নাই।
অন্যান্য : সভায় চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেঙ নিয়ে চসিকের সঙ্গে সিডিএর সৃষ্ট দূরত্ব নিরসনেও আলোচনা হয়েছে। দুই পক্ষের লোকজন বসে বিষয়টি সমাধানে একমত হন মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান।
মেগা প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, নগরবাসীর অসচেতনতার কারণে খালগুলো প্রতিনিয়ত ভরাট হচ্ছে। ময়লা আবর্জনায় পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে আমরা খাল পরিষ্কার করে আসি, পরক্ষণে আবারও ভরাট হয়ে যায়। চাক্তাই খালের কিছু অংশে লোকজন সরাসরি খালে আবর্জনা ফেলে। একবার এই খাল দেখতে গিয়ে আমাদের গায়ের ওপরই ময়লা ফেলেছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে না গেলে কখনো সঠিকভাবে খাল পরিষ্কার করা যাবে না। ফইল্লাতলী এলাকায় গরু কেটে বর্জ্য ও নাঁড়ি-ভুঁড়ি সরাসরি খালে ফেলা হয়। এসব কারা করে, তা এলাকায় চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতো বলার পরও অনেকে এসব করছে, খাল দখলে আছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজের, নগর পরিকল্পনাবিদ আব্দুলাহ আল ওমর, স্টেট অফিসার কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমন যাবে ই-মেইলে
পরবর্তী নিবন্ধকাস্টমের সার্ভারে ত্রুটি ব্যাহত শুল্কায়ন প্রক্রিয়া