খাল-নালাগুলোকে কন্টিনিউয়াস প্রসেসে ক্লিন রাখতে হবে

খাল-নালা অপরিষ্কার থাকায় চকবাজারে পানি, হিজড়া খালের জন্যও জলাবদ্ধতা সমন্বয় সভায় মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩০ জুলাই, ২০২৫ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খাল গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এটি আগে পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রবলেম সেখানে হয়েছে। খালনালা অপরিষ্কার থাকায় চকবাজারের কিছু এলাকায় পানি উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, হিজড়া খালের জন্যও জলাবদ্ধতা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শাহাদাত বলেন, নগরবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য আগামী তিন মাস খালনালা পরিষ্কারে কন্টিনিয়াস প্রসেসে (ক্রমাগতভাবে) কাজ করতে হবে। স্লুইচগেটগুলোকে ফাংশনাল করতে হবে। বিভিন্ন নালায় পিডিবির পোল থাকায় পানি দ্রুত নামে না; এগুলো সরাতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মেয়র বলেন, আপনাদেরকে যখন যে নির্দেশনা দিই, জনগণের মতামত আপনাদের কাছে তুলে ধরি তা আপনাদের সম্পন্ন করতে হবে। আমি চলে আসলে কাজ কিন্তু বন্ধ করা যাবে না। খালনালাগুলোকে কন্টিনিউয়াস প্রসেসে ক্লিন রাখতে হবে।

সভায় মেয়র নগরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে সেবা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের মতামত গ্রহণ করেন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবগুলো সেবা সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, পুরকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা স্ব স্ব এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকৌশলগত সমাধান নিশ্চিত করবেন। একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলবেন, সংশ্লিষ্ট সব সেবা সংস্থার প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন। সেখানে সমস্যা হওয়ার সাথে সাথে জানাবেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ব্যবস্থা নিবেন।

মেয়র বলেন, খালগুলোর মুখ পরিষ্কার করার বিষয়ে নৌবাহিনী এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে হবে। ইতোমধ্যে আগ্রাবাদের বঙ কালভার্ট পরিষ্কারে নৌবাহিনী কাজ করছে, যা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ডা. শাহাদাত বলেন, মুরাদপুর থেকে অঙিজেন রোডের কাজগুলো আমাদের করতে হবে। সেখানে সিডিএ হাজীপাড়া রোড ড্রেনের কাজ করছে। আমার মনে হয় একটু ধীরগতিতে হচ্ছে কাজটা। সিডিএ যদি ওখানে নালার পাশাপাশি রাস্তার কাজটাও করে দেয় তাহলে একটা ফুল প্লেজের কাজ হবে।

মেয়র বলেন, জিইসি থেকে ২ নাম্বার গেটে মাদকসেবীরা গ্রিল, নাট, ডাস্টবিন ইত্যাদি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা পুলিশকে চিঠি দিব এ বিষয়ে যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, কর্ণফুলীর ডাউন স্ট্রিমে ড্রেজিং করতে হবে, যাতে দ্রুত পানি অপসারিত হয়। সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পটি নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, শুধু খালগুলোর মুখ পরিষ্কারের টার্গেট করে প্রজেক্ট নেওয়া হচ্ছে। এটার টেন্ডার হয়ে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালগুলোর মুখ ক্লিয়ার করা শুরু হবে। তিনি বলেন, অস্ট্রোনমিক্যাল টাইড বলে একটা বিষয় আছে। এটা হলে আমরা যতই চেষ্টা করি এই পানি ছয় ঘণ্টায়ও নামাতে পারব না। এজন্য এই খালগুলো দিয়ে আমরা রেগুলেট করি স্লুইচগেট ব্যবহার করে, এতে জোয়ারের সময় পানি ঢোকার কোনো চান্স নেই। আর যখন ভাটা শুরু হবে সাথে সাথে এগুলো আনলক করে দিই। তাহলে যে পানিটা জমা হচ্ছে, বৃষ্টি বাদে তাহলে এই পানিটা আবার থাকবে না।

মেয়রের জলাবদ্ধতা বিষয়ক উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানযোগ্য। প্রয়োজন সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। সিডিএ যদি স্লুইচগেটগুলোকে ফুল ফাংশনাল করতে পারে তবে তা জলাবদ্ধতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। খালনালা থেকে মাটি উত্তোলন করে জলপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা হবে না।

আইইবি চট্টগ্রামের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, সোমবার প্রবল বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে কিছু এলাকায় রাস্তায় পানি জমতে দেখা গেছে। তবে আশার কথা হলো, আগে আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এরিয়াতে পানি চারপাঁচ দিন থাকত। এখন বঙ কালভার্ট পরিষ্কার করায় বেনিফিট হয়েছে। আগেও কমার্স কলেজের ওদিকের পানি আর কমার্স কমার্শিয়াল এরিয়ার পানি দুইটা একত্র হয়ে যেত। এখন এই পানিটা কিন্তু একত্র হয়নি। মাঝখানে শুকনা জায়গা ছিল। জলাবদ্ধতা কমাতে হলে সিটি কর্পোরেশনকে এ ধরনের টেকিনিক্যাল জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী (. দা.) ফরহাদুল আলম, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দীন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক শওকত ইবনে সাহীদ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একেএম মামুনুল বাশরী, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ও এঙিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদাউস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ষায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ঝুঁকি বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধএস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ১৪ জনের ফ্ল্যাট, প্লট ও ভবন হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা