বোয়ালখালীতে কমে আসছে আবাদযোগ্য কৃষি জমি। জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত আবাসন, মিল কারখানা স্থাপন, জমির উর্বরতা হ্রাস, খাল দখল ও দূষণের কারণে নষ্ট হচ্ছে এসব আবাদযোগ্য জমি। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে নীট আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯২০ একর। এরমধ্যে এক ফসলি জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৩২ দশমিক ৪০ একর। দুই ফসলি জমির পরিমাণ ১২ হাজার ১৫২ দশমিক ৪০ একর। তিন ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৩৬ দশমিক ২০ একর।
তবে সম্প্রতি কৃষি অফিসের এক জরিপে দেখা যায়, আবাদযোগ্য জমি জলাবদ্ধতাসহ নানান দূষণের কারণে অনাবাদি হয়ে পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৮৫২ একর। কৃষি অফিসের হিসেব মতে, উপজেলার কধুরখীল ইউনিয়নে প্রায় ১৩২ একর, পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়নে প্রায় ২৭১ একর, পৌরসভায় প্রায় ৩৭০ একর, শাকপুরা ইউনিয়নে প্রায় ৩২১ একর, সারোয়াতলী ইউনিয়নে প্রায় ২৭১ একর, পোপাদিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৯৮ একর, চরণদ্বীপ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর, শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর ও আমুচিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৫০ একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে। অনাবাদি এসব জমিতে আমন মৌসুমে ২ হাজার ৫শত মেট্রিক টন থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হতো। এছাড়া রবি শস্য বা সবজি উৎপাদন হতো ৫ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ বলেন, স্থায়ী জলাবদ্ধতা, পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করে আবাদযোগ্য জমি নষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া জমির উর্বর মাটি বিক্রি করার ফলে চাষের উপযোগিতা হারাচ্ছে জমিগুলো। এভাবে দিনদিন অনাবাদি জমির পরিমাণ বাড়ছে। এ ব্যাপারে সচেতনতার পাশাপাশি চাষের জমি রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে বোয়ালখালী খাল ও ছন্দরিয়া খালের মুখে স্লুইস গেট স্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে।
কধুরখীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আজম শেফু বলেন, এলাকার কৃষকদের নিয়ে পড়ে থাকা অনাবাদি জমিগুলো চাষের আওতায় আনার চেষ্টা করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
চরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শামসুল আলম বলেন, চরণদ্বীপে অনাবাদি জমির পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। যেসব জমিতে তিন ফসলি চাষাবাদ হতো সেইসব জমিতে এখন বালুর মহাল গড়ে উঠেছে। ফলে কৃষকরা চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।
কৃষকরা জানান, পরিবারের খরচ নির্ভর করে এ চাষাবাদের উপর। তবে বর্তমানে জমিতে আগের মতো চাষাবাদ করা যাচ্ছে না। এর বড় সমস্যা হলো জলাবদ্ধতা। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আমন মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারিনি। এছাড়া পানি নেমে না যাওয়ায় এবারে সবজির চারা রোপণ করা যায়নি। এ জন্য খাল দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা, ইটভাটা নির্মাণ, অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণকে দায়ী করে কৃষকরা জানান, খালের প্রবেশ পথ দখল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তাদের জমিগুলো অনাবাদী হয়ে যাচ্ছে। খালগুলো দখলমুক্ত করে খাল খনন ও খালের পাড়ে বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের নিকট আবেদন করেও সুফল মিলছে না। অবিলম্বে এসব খাল দখলমুক্ত করে খনন করা না হলে চলতি বর্ষাকালে চরম ভোগান্তি বাড়তে পারে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।












