লবণ চাষের মৌসুম শুরুর এক মাস পার হয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) খাল খনন কর্মসূচি শেষ না হওয়ায় পানি সংকটে কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের হাজার হাজার একর লবণচাষের জমি এখনো পরিত্যক্ত পড়ে আছে। সঠিক সময়ে খালে পানি না আসায় মাঠ প্রস্তুত ও চাষ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কবে পানির ব্যবস্থা হবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নিশ্চয়তা না থাকায় লোকসানের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন প্রান্তিক লবণচাষিরা।
স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার জেলায় লবণ উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন। প্রতি মৌসুমে এখানকার লবণ মাঠ থেকে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদিত হয়, যা জাতীয় চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণে ভূমিকা রাখে। তবে চলতি মৌসুমে লবণ চাষের উপযুক্ত সময়ে খাল খননের উদ্যোগ না নিয়ে মৌসুম শুরুর পর পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করায় সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এক মাস পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শেষ না হওয়ায় খালে এখনো পানি আনা সম্ভব হয়নি।
প্রান্তিক চাষিরা জানান, সাধারণত বাংলা সনের কার্তিক মাসের শেষ দশ দিন থেকেই লবণ চাষ শুরু হয়। কিন্তু এবার ঠিক সেই সময়েই পাউবো খাল খননের কাজ শুরু করে। ফলে খাল দিয়ে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। পানির অভাবে মাঠ প্রস্তুত করা যায়নি। দীর্ঘদিন পানি না থাকায় অনেক লবণ মাঠে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
চাষিরা প্রশ্ন তুলেছেন, লবণ মৌসুম চলাকালেই কেন পাউবোর খাল খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে? তাদের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীন খাল খননের কারণে লবণের মাঠে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় বর্গাচাষি মো. হামিদ বলেন, লবণাক্ত পানি না পাওয়ায় এখনো মাঠ প্রস্তুতের কাজ শুরু করতে পারিনি। মৌসুম নির্দিষ্ট সময়ের। এক মাসের ঘাটতি পরে আর পোষানো যাবে না। এতে আমরা সবাই বড় লোকসানের মুখে পড়ব।
আরেক চাষি আবদুল কাদের বলেন, এই সময়ে মাঠ প্রস্তুত, বাঁধ সংস্কার ও পানি নিয়ন্ত্রণে সামান্য দেরি হলেই পুরো মৌসুমটাই ঝুঁকির মুখে পড়ে। মৌসুমের শুরুতেই যদি উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয় না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই ভূমিকার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন লবণচাষিরা। গত রোববার তারা মাঠে মানববন্ধন করে খাল খননে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানান এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।
এ ব্যাপারে লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এডভোকেট সাহাব উদ্দিন বলেন, আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে নই। কিন্তু লবণ উৎপাদন ব্যাহত করে কোনো উন্নয়ন আমরা চাই না। খাল খনন চলুক, কিন্তু এমনভাবে করতে হবে যেন লবণ উৎপাদনও একসঙ্গে চলতে পারে। শিগগিরই সমাধান না হলে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
চাষিদের দুরবস্থার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কঙবাজারের উপ–ব্যবস্থাপক জাফর আলম ভূঁইয়া। তিনি চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, সরকারি প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে লবণ চাষ ব্যাহত হচ্ছে সত্য। যত দ্রুত সম্ভব খাল খননের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।












