লোহাগাড়ায় পুনর্খননের নামে খালের দুই পাড়ের সহস্রাধিকের অধিক গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ এলাকার দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বামির খালের দুই কিলোমিটার এলাকা থেকে এই গাছগুলো কাটা হয়েছে। খাল খননের নামে নির্বিচারে এতোগুলো গাছ কেটে ফেলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সামনের বর্ষা মৌসুমে পানির স্রোতে ভেঙে যেতে পারে খালের পাড়। জানা যায়, ২০২৪–২৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় ভূ উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বামির খালের দুই কিলোমিটার পুনর্খননের কাজ শুরু হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। উক্ত কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এবি এন্ড সন্স। পুনর্খননের ফলে খালের উপরের অংশে প্রস্থে ৩৩ ফুট ও নিচের অংশে হবে ১০–১২ ফুট। গভীরতা হবে ১২–১৩ ফুট।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বামির খাল লোহাগাড়া সদর ও আধুনগর ইউনিয়ন অতিক্রম করে ডলু খালের সাথে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধীনে ২০১১–১২ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় একই স্থানে পুনর্খনন কাজ করা হয়েছিল। বর্তমানেও একই স্থানে পুনর্খনন কাজ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, বামির খালে একই স্থানে কেন বার বার পুনর্খনন কাজ করা হচ্ছে। খননকৃত অংশের আগে–পরে বামির খালে পলি জমে ও পাড় ভেঙে খুবই সংকীর্ণ হয়ে গেছে। মূলত খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটর চালানোর জন্য খালের দুই পাড়ের গাছগুলো কেটে ফেলতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন যেহেতু শুষ্ক মৌসুম খালের ভেতর এক্সকেভেটর চালিয়ে খনন কাজ করা যেত। কাটতে হতো না এতোগুলো গাছ।
স্থানীয়রা জানান, খালের দুই পাড়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি রয়েছে। তারাই খাল পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগুলো রোপণ করেছিলেন। সম্প্রতি জমির মালিকদের জোরপূর্বক খালের পাড়ের গাছগুলো কেটে নিতে বাধ্য করেন খাল পুনর্খনন কাজে নিয়োজিতরা। শুরুতে কেউ গাছ কাটাতে চায়নি। পরে খাল খনন কাজ শুরু হলে এক্সকেভেটর দিয়ে দুই পাড়ের গাছগুলো উপড়ে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে খালের দুই পাড়ের গাছগুলো কেটে নিয়েছেন জমির মালিকরা।
স্থানীয় মুহাম্মদ ইয়াছিন আরফাত জানান, বিএডিসি ও সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদারের লোকজন খালের দুই পাড়ের গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। বাধ্য হয়ে গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। অন্যথায় এক্সকেভেটর দিয়ে গাছগুলো ভেঙে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছিল। খাল খননের নামে দুই পাড়ের গাছগুলো কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। যা কোনভাবে কাম্য নই। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে খাল খনন যেমন জরুরি, তেমনি গাছ রক্ষা করাও জরুরি। গাছগুলো থাকায় খালের পাড় শক্ত ছিল। গাছগুলো কেটে ফেলায় ধীরে ধীরে খালের পাড়ও ভেঙে যাবে।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন জানান, খাল পুনর্খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটর চলাচলের জন্য দুই পাড়ের গাছগুলো কাটতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ইউনিটের উপসহকারী প্রকৌশরী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. ইকবাল হোসেন জানান, খনন কাজে ব্যবহৃত এক্সকেভেটর চলাচলে জন্য খালের দুই পাড়ের গাছগুলো কাটতে বলা হয়েছে। গাছগুলো কাটতে কারো কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়নি। এছাড়া খালের দুই পাড়ের গাছ কাটার বিষয়টি ওয়ার্ক অর্ডারেও উল্লেখ করা নেই বলে জানান তিনি।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, খাল পুনর্খনন করার জন্য পাড়ের গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। এতোগুলো গাছ কাটা বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। গাছ কাটার ব্যাপারে কোন অনুমতিও নেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।