আনোয়ারায় খালে লবণ পানি, বোরো চাষে অনিশ্চয়তা নিয়ে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ২০ হাজার কৃষকের। এ অবস্থায় উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ৬ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরু হয়েছে বোরো মৌসম। তবে খালে লবণ পানি ও সেচ সংকট বিবেচনায় কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে না বলে জানা গেছে। কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় লবণসহিষ্ণু বীজ বিতরণ করার কারণে খালে লবণ পানি থাকলেও বোরো চাষে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার রমজান আলী।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও এলাকাবাসী জানায়, আনোয়ারা উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ছোট–বড় মিলিয়ে ৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৭টি খাল রয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশ খাল খনন না করার কারণে চলতি বোরো মৌসমে খালে পানি সংকট দেখা দিবে। বর্তমানে ভরাট হয়ে যাওয়া ছাড়াও কচুরিপানা ভরে যাওয়ায় অধিকাংশ খালে স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় কর্ণফুলী নদীর শিকলবাহা খাল ও সাঙ্গুর লবণ পানি আনোয়ারার বিভিন্ন খালে ঢুকে পড়ায় বোরো চাষে তার প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় শোলকাটা গ্রামের কৃষক মো.মহি উদ্দীন জানান, খালে লবণ পানির কারণে সেচ সুবিধা না থাকায় শোলকাটা, ধানপুরা, শিলাইগড়া, ঝিওরীসহ বিভিন্ন গ্রামের একাধিক বিলে বোরো চাষ হচ্ছে না। এ এলাকার অধিকাংশ কৃষক জমির বীজ তলাও তৈরি করেননি। এদিকে গত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে বাঘখাইন– কেয়াগড় এলাকা তলিয়ে যাওয়া ও স্লুইচ গেট নির্মিত না হওয়ায় খালে লবণ পানি ওঠানামা করছে। সব মিলিয়ে লবণ পানির কারণে উপজেলার আনোয়ারা, বারখাইন, বরুমচড়া, হাইলধর ও পরৈকোড়া ইউনিয়নের কয়েক শত একর জমির ২০ হাজারের বেশি চাষীর চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
আনোয়ারা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আনোয়ারার ১১ ইউনিয়নে ৬০৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৯৩৭ মে: টন। ইতিমধ্যে উপজেলার বরুমচড়া, জুইদন্ডি, বারখাইন, হাইলধর, চাতরি, বৈরাগসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বোরো চাষ শুরু হয়েছে।
চলতি মৌসমে উন্নতমানের ধানের মধ্যে ব্রি হাইব্রিড ৮, এসএল৮ এইচ, এসিআই, হিরা, তেজ গোল্ড, বিআর ২৬, ব্রিধান ২৮, ২৯, ৪৭, ৪৮, ৫৫, ৫৮, ৬৭, ৭৪, ৭৫, ৮৮, ৮৯, ৯২, ৯৭, ৯৯, ১০০,১০১, ১০২, ১০৪, ১০৮ , ২৫ গোলধানসহ আরো নানান জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, বাঘখাইনের স্লুইচ গেটটি তলিয়ে যাওয়ার পর নতুন একটি স্লুইচ গেট নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যয় ২৫ কোটি টাকার কম বেশি হতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) উপ সহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান বলেন, আনোয়ারার অধিকাংশ খালে লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বোরো চাষে প্রভাব পড়বে। তিনি আরো বলেন, আনোয়ারার ২৭টি খালের মধ্য ২০টি খালের বেশি সংস্কার প্রয়োজন। চলতি বছরে ৩০ কিলোমিটারের বেশি খাল সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতি বছর দেওতলা খাল, তেকোটা খাল, গোবাদিয়া খাল, মোহছেন আউলিয়া খাল ও বরৈয়া খাল খনন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আনোয়ারা কৃষি অফিসার রমজান আলী জানান, লবণাক্ততার কথা মাথায় রেখে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে প্রণোদনার লবণসহিষ্ণু বীজ প্রদান করা হয়েছে। যার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে আশা করি উৎপাদন তেমন ব্যাহত হবে না। ইনশা আল্লাহ আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।