খালে মিলল শিশুর লাশ

নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টার পর নগরীর গোসাইলডাঙ্গায় উদ্ধার । স্থানীয়দের দাবি, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বক্স ড্রেনের ঢাকনা খোলা থাকায় পড়ে গেছে শিশুটি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ জুন, ২০২৪ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর নগরীর বন্দর থানাধীন গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের আবিদারপাড়া এলাকার নাসির খাল থেকে সাইদুল ইসলাম শহীদুল () নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মৃত সাইদুল বিল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আলী আকবরের ছেলে। সে আগ্রাবাদ শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার মা নাছিমা আক্তার বাক্‌প্রতিবন্ধী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা বক্স ড্রেনের ঢাকনা (স্ল্যাব) খোলা থাকায় শিশুটি খেলতে গিয়ে অসাবধানবশত খালে পড়ে গেছে। দুদিন আগে ড্রেনের ওপর থেকে ঢাকনাগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।

নিহত শিশু সাইদুলের বোন আঁখি আক্তার মিম জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাইদুল বাসা থেকে বের হয়েছিল। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় রাতে তার মা, নানি ও আশপাশের লোকজন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেছিল। সকালে নালায় তার লাশ পাওয়া যায়। মা ও নানির সঙ্গে তারা দুই ভাইবোন থাকেন। রিকশা চালক বাবা আলী আকবর আরেকটি বিয়ে করে আলাদা থাকেন।

শিশুটির পিতা আলী আকবর বলেন, আমার ছেলে বক্স ড্রেনের উপর সন্ধ্যার সময় খেলার সময় পড়ে যায়। ড্রেনের ওপর যদি ঢাকনাগুলো থাকত, তাহলে আমার ছেলেকে হারাতাম না।

সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানান, আবিদারপাড়া থেকে আসা একটি নালা ঠাণ্ডা মিয়া সড়কের মোড়ে এসে নাসির খালের সঙ্গে যুক্ত হয়। আগে নালাটি উন্মুক্ত ছিল। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় নালাটি সংস্কার করে ১৭০ মিটার বক্স ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ড্রেনের উপর মোট ২৬টি ঢাকনা আছে। প্রতিটি ঢাকনার হিসেবে বক্স ড্রেনের ওপর প্রতিটি গর্তের আয়তন ১ দশমিক ২ বর্গমিটার।

শিশুর মরদেহ উদ্ধারের খবরে ঘটনাস্থলে যান সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় খাল সংস্কার ও বক্স ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আমরা জানতে পেরেছিলাম, বক্স ড্রেনের উপর লোডেড ট্রাক যাওয়ার কারণে কয়েকটা স্ল্যাবের ক্ষতি হয়েছে। নির্মাণ ত্রুটিরও অভিযোগ কিছুটা পেয়েছিলাম। এগুলো খতিয়ে দেখার জন্য আমি ৫৬টা স্ল্যাব তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিই। স্থানীয়রা যে ধারণা করছেন সেটি সঠিক নয়। গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ৫৬টা স্ল্যাব তুলে নেওয়া হয়। শিশুটি কিন্তু নিখোঁজ হয়েছে বিকাল ৫টার দিকে। আর আমাদের স্ল্যাব তোলা হয়েছে রাত ৮টার দিকে। তাহলে শিশুটির স্ল্যাবের অংশে ড্রেনে পড়ে নিখোঁজের সম্ভাবনা মোটামুটি নেই বললেও চলে। তারপরও যেহেতু বক্স ড্রেনের মাত্র ২০০ গজ দূরে খালে লাশটা পাওয়া গেছে, আমরা কিন্তু সেটা বলছি না। আরও একটা বিষয় খেয়াল করবেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি নেই। খালের পানি, ড্রেনের পানি একেবারে স্ট্রেইট আছে। এখানে পড়ে গিয়ে স্রোতে তলিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আশা করি পুলিশের তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের বলেন, শিশুটি শনিবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিল। স্থানীয় লোকজন সকালে খালে শিশুটির মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, নালার উপর স্ল্যাব খোলা থাকায় শিশুটি খেলার সময় নালায় পড়ে গিয়ে মারা যেতে পারে। বাকিটা তদন্তের পর জানা যাবে।

চার বছরে ১০ মৃত্যু : নগরের খালনালায় পড়ে গত চার বছরে মারা গেছে ১০ জন। এর মধ্যে গত ২৭ মে আছদগঞ্জ শুটকি পল্লী এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যান ২৭ বছর বয়সী তরুণ আজিজুল হাকিম ইমন। একই দিন চান্দগাঁও থানার একটি ড্রেনে পড়ে যায় ১২ বছরের শিশু মনির হোসেন। একদিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্পদ বৃদ্ধিতে এমপিদের ছাড়িয়ে গেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা
পরবর্তী নিবন্ধআসামি ‘ছিনিয়ে’ নিতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, আনোয়ারা রণক্ষেত্র