বান্দরবানে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে মেস্কিছড়া খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে প্রভাবশালী চক্র। হাফেজঘোনা থেকে ইসলামপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে দখলদারদের আগ্রাসনে খালটি মৃতপ্রায় হয়ে কোনোমতে টিকে রয়েছে যেন। জেলা শহরের পানি প্রবাহের একমাত্র খালটি দখলের কারণে হাফেজঘোনা, বরিশালপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ইসলামপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের পানির উৎসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দখল প্রক্রিয়া চলমান থাকায় খালটি কোথাও কোথাও ছোট হয়ে ড্রেনের মত হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে যায় এ প্রতিবেদক। এদিনও জেলা শহরের হাফেজঘোনা স্টিল ব্রিজ ও সাঙ্গু স্কুল এলাকায় মেস্কিছড়া খাল দখল করে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা গেছে। অথচ কয়েকদিন আগেই জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযানে গিয়ে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং অবৈধভাবে খালের ভিতরে তৈরি করা স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও দখল প্রক্রিয়া থামছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় অভিযোগ করে বলেন, মেস্কিছড়া খালের বেশির ভাগ অংশই দখল করেছে জেলা আওয়ামী লীগের এক উপদেষ্টা। তার দেখানো পথেই জসিম, জুয়েল, সাঈদ, শুভ, নজরুলসহ আরও কয়েকজন মিলেমিলে খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
হাফেজঘোনার বাসিন্দার চন্দন বিশ্বাস চান্দু বলেন, বাধা দেওয়ার পরও অর্থবিত্ত এবং ক্ষমতাবান হওয়ায় চক্রটি খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করেনি। খালের ভিতরে ৫–৬ ফুট পর্যন্ত দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় রাস্তাঘাটগুলো ডুবে যায়। সাঙ্গু জুনিয়র হাইস্কুল, হাফেজঘোনা প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশেপাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এতে মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ে।
ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা সাথী রাণী ও সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নলকূপ ও আশেপাশের পাহাড়ি ঝরনার পানি শুকিয়ে যায়। তখন মেস্কিছড়া খালই তাদের দৈনন্দিন কাজে পানির চাহিদা মেটায়। কিন্তু খালটি দখলের কারণে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির কষ্ট পাচ্ছে শ্রমজীবী দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা। খালটি দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহের পথ সচল রাখার দাবি জানাচ্ছি। তবে খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্তরা বলেন, তারা ক্রয়কৃত জায়গার উপরের স্থাপনা নির্মাণ করেছে।
পৌরসভার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, নিজের জায়গা ছাড়িয়ে খালের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া আফরোজ জানান, খাল দখলের অভিযোগ ঘটনাস্থল পরির্দশন করে নির্মাণ কাজ বন্ধে করে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে খাল দখলের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।