নগরের বিভিন্ন খালের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে খনন করলে আগামী বর্ষায় জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে মতামত ব্যক্ত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এছাড়া নগরের স্লুইচ গেটগুলো নিয়মিত মনিটরিং, খাল খননের পাশাপাশি নদীতে জলপ্রবাহ ঠিক রাখতে সিলট্র্যাপ নির্মাণ প্রয়োজন বলেও মত দেয়া হয়। পাশাপাশি ভাসমান ‘ডেব্রিস কালেক্টর’ ব্যবহার করে স্রোতে ভাসমান পলিথিন–প্লাস্টিক আটকাতে পারলে ঠিক থাকবে জলস্রোত, যা জলাবদ্ধতা কমাবে বলেও মনে করেন তারা।
গতকাল টাইগারপাস নগর ভবনে মেয়রসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় এ মতামত ব্যক্ত করা হয়। সভায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরের আগ্রাবাদের ডেবার পাড়ে নাগরিকদের সুস্থ বিনোদনের সুযোগ গড়তে ওয়াকওয়েসহ উন্মুক্ত স্থান করার মাধ্যমে ডেবাটিকে দখলদারদের হাত থেকে বাঁচাতে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরলে সবাই তাতে ঐক্যমত পোষণ করেন। ঢেবার পাড় সৌন্দর্যবর্ধনে সম্ভাব্যতা আগামী সপ্তাহে বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এটি পরিদর্শন করবেন বলেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান, সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। বিশেষজ্ঞ প্যানেলে ছিলেন অস্ট্রেলিয়া বেইজড ড্রেনেজ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গবেষক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সিটি মেয়রের ড্রেনেজ সিস্টেম বিষয়ক উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ। তারা নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে প্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরি করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে প্রকল্পগুলো ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি না প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর সঠিকভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে জোর দেয়া না হয়। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। কর্পোরেশনের উচিত এজন্য একটি স্বতন্ত্র আইটি সেল করা, যাদের কাজ থাকবে বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এগুলো নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত অনলাইন প্লাটফর্মে পরিচালনা করবে। এ প্লাটফর্ম থেকে যে কেউ বাড়ি করার আগে আগামী ১০০ বছরে অত্র এলাকার জলসীমা সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু প্রকল্প না করে অটোমেশন এবং প্রকল্প সচল রাখতে দক্ষ জনবল গড়ার বিষয়েও মনোযোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাথে চসিককে একসাথে কাজ করতে হবে।
এ সময় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের ৭১টি খালের মধ্যে বর্তমানে ৫৭টির অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি খালে কাজ চলছে। বাকি ২১টি খালের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিডিএ যে ৩৬ টি খাল খননে কাজ করছে সে প্রকল্পটি চসিকের হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে এ কাজটি সিডিএ’কে দেয়ায় নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে বাকী ২১টি খালও খনন করতে হবে।
আগ্রাবাদ ডেবা প্রসঙ্গ : আগ্রাবাদ ডেবাকে ঘিরে সিটি মেয়র নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরলে ঢেবাটির ভূমির মালিকানার বিষয়ে বন্দর ও রেলওয়ের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। তখন মেয়র বলেন, আমি চিরকাল মেয়র থাকব না। আপনারাও যারা বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে আছেন তারাও আজীবন সংস্থার দায়িত্বে থাকবেন না। তাই আমাদের নাগরিকদের প্রয়োজনে উদার হতে হবে। আসুন আমরা সবগুলো সংস্থা মিলে অবহেলিত এ জায়গাটিতে নাগরিকদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেই।
তখন মেয়রের প্রস্তাবে সায় দিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন সেবা সংস্থার শীর্ষ কর্তাবৃন্দ আগামী সপ্তাহে ডেবার পাড় এলাকা পরিদর্শন করে সবগুলো সংস্থা সম্মিলিতভাবে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের সম্ভাবতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেন।
এ সময় মেয়র বলেন, আগ্রাবাদ ডেবা হতে পারে নাগরিকদের চিত্ত–বিনোদনের স্থান। নগরে মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে এমন উন্মুক্ত স্থান কম। ডেবার পাড়টিকে যদি আমরা সৌন্দর্যবর্ধন করে ওয়াকওয়ে আর বসার স্থান করে দিতে পারি তাহলে মানুষ সেখানে হাঁটতে পারবে, অবসরে সময় কাটাতে পারবে। এখন যেহেতু সংস্থাগুলোর মধ্যে আগের মত দ্বন্দ্ব নেই। সবাই আমাকে সহযোগিতা করছেন, সুযোগে নাগরিকদের জন্য আমি আগ্রাবাদ ডেবার পাড়ে ওয়াকওয়ে করার মাধ্যমে ঢেবাটিকে আমি রক্ষা করতে চাই। অন্যথায় একদিন এই ডেবাটি দখলদারদের করালগ্রাসে হারিয়ে যাবে।